Header Ads

নতুন কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপি

                      

নতুন কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপি


            

সাম্প্রতিক নানা ইস্যুতে বিএনপি এখন এক গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন সময় পার করছে। গণতন্ত্রের দীর্ঘ লড়াইয়ে থাকা দলটি একদিকে অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা সামলাচ্ছে, অন্যদিকে নানা অপপ্রচারের মুখোমুখি হচ্ছে। পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যার ঘটনার পর দলটির বিরুদ্ধে চালানো ‘অপপ্রচার’-এর বিরুদ্ধে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো একযোগে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।

দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার সূত্র ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করা হচ্ছে। বিষয়টিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে দলটি। এমন প্রেক্ষাপটে গত সোমবার বিএনপি সারা দেশে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে এবং অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার সংকল্প জানায়।

দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ

বিএনপি হাইকমান্ড দলের ভেতরের বিশৃঙ্খল আচরণের বিরুদ্ধে এবার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন জেলায় দলের কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে। তারেক রহমান এসব বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “দল কোনো দুর্নীতিবাজের আশ্রয়স্থল হতে পারে না। অনিয়মে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”

এই অবস্থান থেকে বিএনপি ইতোমধ্যে শতাধিক নেতাকর্মীর নামের তালিকা তৈরি করেছে, যারা এসব অপকর্মে জড়িত। এই তালিকায় রয়েছে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার নামও। কেউ কেউ নিজেদের পদ রক্ষায় লন্ডনে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন, কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। এমনকি কিছু অঙ্গসংগঠনের কমিটি ভেঙে দেওয়ার কথাও ভাবছেন তারেক রহমান। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতারা সতর্কতামূলক বার্তা দিচ্ছেন, শোকজ ও বহিষ্কারের পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে।

সংগঠন থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

দলীয় সূত্র বলছে, শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অপকর্মে জড়িত থাকার দায়ে ইতোমধ্যে ৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার বহিষ্কার এবং ২ হাজারকে শোকজ করা হয়েছে। ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলেরও শত শত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি মিটফোর্ডে একজন ব্যবসায়ী খুন হওয়ার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পাঁচজন নেতাকর্মীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপি স্পষ্ট করে জানিয়েছে, প্রমাণ পাওয়া গেলে কেউই ছাড় পাবে না—even প্রভাবশালী নেতারাও নয়।

তারেক রহমানকে ঘিরে পরিকল্পিত অপপ্রচার

বিএনপি নেতারা দাবি করছেন, তারেক রহমানকে পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক অপপ্রচারের টার্গেট করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে চলছে তার বিরুদ্ধে নোংরা ক্যাম্পেইন। দলের নেতারা মনে করছেন, তারেক রহমান দেশে ফিরতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন—এ কথা জেনেই একটি গোষ্ঠী তাকে আটকাতে চায়। তার জনপ্রিয়তা রুখতে ষড়যন্ত্র চলছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, “অপপ্রচার রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব। মিথ্যা দিয়ে সত্য ঢেকে রাখা যায় না।” তিনি আরও বলেন, “অন্যায়কারী যে-ই হোক, আইনের আওতায় আনা উচিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনগণকে সঙ্গে নিয়েই এগোতে হবে।”

‘হাইব্রিড’ বিএনপি সদস্যদের নিয়ে উদ্বেগ

বিএনপি নেতারা জানান, আগের আওয়ামী সরকারের সময়ে যারা সুবিধা নিয়েছেন, তারা এখন হঠাৎ করে বিএনপি নেতারূপে আবির্ভূত হয়েছেন। এসব ‘হাইব্রিড’ লোকজন দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজিতে যুক্ত হচ্ছেন, ফলে ত্যাগী নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্মের দায় নিতে হচ্ছে বিএনপিকেই। নেতারা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী বিএনপি নেতারাও এসব হাইব্রিড সদস্যকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন।

সাংগঠনিক দ্বন্দ্ব ও সহিংসতা

মানবাধিকার সংস্থা HRSS-এর তথ্যমতে, ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ১১ মাসে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ৪৭৮টি সংঘর্ষ হয়েছে, যাতে নিহত হয়েছেন ৮০ জনের বেশি, আহত হয়েছেন হাজারেরও বেশি। আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানায়, গত ১০ মাসে বিএনপির অন্তত ৬৮ জন নেতাকর্মী খুন হয়েছেন।

ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “দেশ-বিদেশে গভীর চক্রান্ত চলছে, যার কেন্দ্রবিন্দু তারেক রহমান। কারণ, তিনি দূর দেশে থেকেও দেশজুড়ে বিএনপিকে সংগঠিত করেছেন। যারা অপকর্মে জড়িত, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। কেউ অনৈতিক কাজ করলে, দলের নাম ভাঙিয়ে অন্যায় করলে, তাদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “কোনো উসকানিতে যেন কেউ প্রতিক্রিয়া না দেখায়, সেজন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শেষ কথা

বিএনপি মনে করছে, এই সংকটময় সময়ে জনগণই তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকতে দল এখন কঠোর অবস্থানে। অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় বিএনপি সামনে আরও সক্রিয় ও সংগঠিত হবে—এই বার্তা এখন স্পষ্ট।

No comments

Powered by Blogger.