বিএনপিতে শুদ্ধি অভিযানে নতুন সিদ্ধান্ত
পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর শুক্রবার (১২ জুলাই) রাতে বুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম উল্লেখ করে স্লোগান দেওয়া হয়। বিএনপির নেতারা এটিকে একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার হিসেবে দেখছেন।
দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেউ কেউ ফেসবুকেও তারেক রহমানের নাম উল্লেখ করে পোস্ট দিয়েছেন। এসব পোস্ট ও স্লোগান নিয়ে দলের ভেতরে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এটি “নোংরা ও পুরানো রাজনৈতিক চর্চা”— কিছু ঘটলেই বিএনপির ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হয়। অথচ অনেক সময় পরে প্রমাণ হয়, বিএনপি জড়িত ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, খুলনায় যুবদল কর্মীকে হত্যা কিংবা চাঁদপুরে মসজিদের খতিবকে কুপিয়ে আহত করার মতো ঘটনাগুলো নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না। অথচ এসবও গুরুতর অপরাধ।
গত শুক্রবার খুলনার দৌলতপুর থানায় যুবদলের এক সাবেক নেতাকে গুলি করে ও রগ কেটে হত্যা করা হয়। একই দিন চাঁদপুর শহরের প্রফেসরপাড়া মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা নুরুর রহমানকে জুমার নামাজের পর মসজিদের ভেতরে কুপিয়ে জখম করা হয়।
তবে বিএনপির নেতাকর্মীরা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। যদি কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তাহলে দলের পক্ষ থেকে যথাযথ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘যে পরিমাণ এখতিয়ার আমাদের আছে, আমরা তা ব্যবহার করছি। কেউ অপরাধ করলে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার উদাহরণও রয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের দায়িত্ব, আর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের।’
দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযানের বিষয়ে তিনি জানান, ‘জেলা থেকে তৃণমূল পর্যন্ত যাচাই-বাছাই করা হবে। কারও “রেকর্ড খারাপ” থাকলে তাকে আগেভাগেই দল থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।’
এদিকে, নিহত ব্যবসায়ী চাঁদ সোহাগকে যুবদলের কর্মী বলে দাবি করে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ ঘটনায় পাঁচজনকে আজীবনের জন্য সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তবে তারা অভিযোগ করেছে, ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকা তিনজনকে মামলার আসামি করা হয়নি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।’
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ফেসবুকে তার ভেরিফায়েড পেজে লিখেছেন, ‘মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করতে সরকার বদ্ধপরিকর। ইতোমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা “দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে” পাঠানো হবে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন, ২০০২ এর ধারা ১০ অনুযায়ী দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা হবে।
No comments