লাল প্রোফাইল' কর্মসূচি কার আইডিয়া?
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিহত সদস্যসহ অন্যান্যদের স্মরণে রাষ্ট্রীয় শোক দিবস ঘোষণা করে। এই ঘোষণাকে আন্দোলনকারীরা প্রত্যাখ্যান করে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও নির্যাতনের শিকারদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে চোখ-মুখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলার এবং ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচার লাল করার কর্মসূচি ঘোষণা করে।
তবে এ কর্মসূচি কার উদ্যোগে হয়েছিল—তা নিয়ে দেখা দিয়েছে মতভেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের—দুজনেই এই কর্মসূচির উৎস সম্পর্কে ভিন্ন দাবি তুলেছেন।
শিবিরের দাবি: 'লাল প্রোফাইল' আইডিয়ার সূত্রপাত আমাদের হাতেই
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ জানান, রাষ্ট্র যখন ‘গণহত্যা’র বদলে ‘রাষ্ট্রীয় শোক’ ঘোষণা করে, তখন আবু সাদিক কায়েম তার কাছে পরামর্শ চান। ফরহাদ বলেন, "আমি বলি, যেহেতু সরকার কালো বেছে নিয়েছে, আমরা লাল বেছে নিই। লাল মানে রক্ত, যা দিয়ে আমরা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে পারি।"
তিনি আরও বলেন, “আমি প্রস্তাব দিই লাল কাপড় চোখে-মুখে বেঁধে ছবি তোলা এবং ফেসবুক প্রোফাইল লাল করার। সাদিক কায়েম এতে সম্মতি দেন। পরে আমরা প্রেস রিলিজ তৈরি করে বিভিন্ন সমন্বয়কারীর কাছে পাঠাই। কর্মসূচি ঘোষণা হতেই তা ব্যাপক সাড়া ফেলে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ড. ইউনূস এবং খালেদা জিয়ার মতো ব্যক্তিদের ফেসবুকেও লাল প্রোফাইল দেখা যায়।”
ফরহাদ জানান, “আমরা তখন সরাসরি আন্দোলনে না গিয়ে সফট কর্মসূচিতে মনোযোগ দিচ্ছিলাম। গ্রেপ্তার আর মামলার ভয়ে অনলাইন কর্মসূচি চালু রাখি। এই ‘লাল প্রোফাইল’ ছিল সেই সফট কর্মসূচির শেষ ধাপ। এরপর আমরা মাঠের আন্দোলনে যাই।”
আবদুল কাদেরের দাবি: যৌথভাবে আলোচনা করে ঠিক হয় কর্মসূচি
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “জুলাইয়ের শেষদিকে প্রতিদিনের কর্মসূচি নির্ধারণ করা হতো একাধিক পক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে। ছাত্রশিবিরের সাদিক কায়েম এবং ছাত্রদলের রাকিব-নাসির ভাইয়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ ছিল। কর্মসূচি ঘোষণার আগের দিনও আমরা দফায় দফায় বৈঠক করি।”
তিনি বলেন, “সরকার যখন ২৯ জুলাই শোক দিবস পালনের ঘোষণা দেয়, তখন বিকেলে নাসির ভাই ‘লাল ব্যাজ’ ধারণের প্রস্তাব দেন। বিষয়টি নিয়ে আমি সাদিক ভাইকে জানাই। কিছুক্ষণ পর তিনি ফোন করে সম্মতি দেন।”
আবদুল কাদের জানান, “প্রতিদিনের মতো সেদিনও আমি, মাসউদ, রিফাত ও মাহিন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করি। রিফাত প্রস্তাব দেয়, আমরা চোখে-মুখে কালো কাপড় বাঁধতে পারি। তখন আমি বলি, লীগ যেহেতু কালো কাপড় দিয়েছে, আমরা লাল কাপড় বেছে নিতে পারি। মাহিনও এতে একমত হয়।”
পরবর্তীতে রিফাত রশিদ একটি পোস্টের মাধ্যমে সবাইকে আহ্বান জানান—যাদের লাল কাপড় নেই, তারা যেন অন্তত ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার লাল করে প্রতিবাদে অংশ নেন। এই পোস্টেই হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের পরামর্শ দেন সাদিক ভাই এবং নিজেই কিছু হ্যাশট্যাগ সরবরাহ করেন।
No comments