ফিরে দেখা ৮ জুলাইয়ের ঐতিহাসিক ছাত্র-আন্দোলন
২০২৪ সালের ৮ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে গঠিত হয় ৬৫ সদস্যের একটি সমন্বয়ক কমিটি, যারা পরবর্তীতে গণআন্দোলনের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোটা বৈষম্যের স্থায়ী সমাধানের দাবিতে গঠিত এই কমিটি জুলাইয়ের আন্দোলনকে ঐতিহাসিক গুরুত্ব দেয়। ওই দিনই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরকারের কাছে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর সাড়া পাওয়া যায়নি।
ভয়ের আবছা সময় পার হয়ে যাচ্ছিল ভোরের দিকে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা ছিল—ভোর হোক, প্রয়োজনে রক্তের বিনিময়ে হলেও হোক। সেই অদম্য মনোবল নিয়েই আন্দোলনকারীরা দ্বিতীয় দিনের মতো সাহসিকতার সঙ্গে পালন করেন ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি।
৭ জুলাইয়ের সাফল্য এবং প্রতিবাদের জোয়ারকে শক্তি করে ৮ জুলাই আরও বড় পরিসরে রাজপথে নামেন শিক্ষার্থীরা। দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে একটি মিছিল বের হয়ে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে শাহবাগে গিয়ে অবরোধ গড়ে তোলে। একই সময়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেন, আর ইডেন কলেজ ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ছাত্রীদের নেতৃত্বে নীলক্ষেত অবরোধ করা হয়। রাজধানীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে এই আন্দোলন, যা রূপ নেয় এক ঐতিহাসিক ছাত্র-আন্দোলনে।
এই দিন ঢাকার ১১টি স্থানে সড়ক অবরোধ, ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, ৩টি স্থানে রেলপথ অবরোধ এবং ৬টি জাতীয় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের অনেক এলাকা।
পরে শিক্ষার্থীদের মিছিল কারওয়ান বাজার এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে আন্দোলনকারীরা সেই বাধা অতিক্রম করে বিকেল ৫টার দিকে ফার্মগেটে অবস্থান নেন এবং সেখানে অবরোধ গড়ে তোলেন। মিছিল ক্রমেই বড় হতে থাকে, অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। রাত ৮টার পর আন্দোলনকারীরা শাহবাগে ফিরে গিয়ে সেখান থেকেই পরদিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
৮ জুলাই সরকারকে তিন দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জানানো হয়, এই তিন দিনে দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে, চালানো হবে গণসংযোগ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করা হবে। আন্দোলনের মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম জানান, মঙ্গলবার অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যমে সর্বাত্মক প্রস্তুতি শেষে বুধবার থেকে শুরু হবে পূর্ণমাত্রার অবরোধ।
একদিকে চলছিল অবরোধ কর্মসূচি, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন গড়ে তুলতে সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত হয় ৬৫ সদস্যের সমন্বয়ক কমিটি। এই কমিটির মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়।
No comments