Header Ads

সাহস থাকলে কাউন্সিল ডাকুন, তখন বোঝা যাবে কত ভোট পান

              

সাহস থাকলে কাউন্সিল ডাকুন, তখন বোঝা যাবে কত ভোট পান




 জাতীয় পার্টি থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন। তিনি বলেন, “সাহস থাকলে কাউন্সিল ডাকুন। আমি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। আমার প্যানেলে মহাসচিব হবেন রুহুল আমিন হাওলাদার। আপনি নির্বাচনে আসেন, আমি দেখতে চাই আপনি কত ভোট পান।”

আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে আয়োজিত এক যোগদান অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আনিসুল এই চ্যালেঞ্জ দেন।

জাতীয় পার্টির প্রতি দায়বদ্ধতা ও ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “জাতীয় পার্টির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ করছি। জাতীয় পার্টিকে ভাঙতে দেওয়া যাবে না। অনেক কষ্টে এই দল গড়ে তুলেছি। যেন এটি মুসলিম লীগ বা জাসদের মতো না হয়ে যায়।”

তিনি আরও বলেন, “এরশাদ সাহেব আমাকে বলে গেছেন, জাতীয় পার্টিকে যেন সাধারণ মানুষের মাঝে রাখা হয়। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে পার্টির ভেতরে এখন পদ নিয়ে বাণিজ্য চলছে। আমি চেয়ারম্যানকে এ বাণিজ্য বন্ধ করতে বলেছি। কিন্তু তিনি তা করেননি।”

জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী আচরণের অভিযোগ

আনিসুল বলেন, “জি এম কাদের কথায় কথায় গণতন্ত্রের কথা বলেন, অথচ তিনিই দলে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছেন। এরশাদ সাহেব কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতেন। কিন্তু কাদের সাহেব নিজেকে খোদার চেয়েও শক্তিশালী মনে করেন। তিনি বারবার বলেন, 'আমি চেয়ারম্যান, আমার কথাই শেষ কথা'। এইভাবে কোনো দল চলে না। আলোচনার মাধ্যমেই দল চালাতে হয়।”

হাওলাদারের সংহতি ও দুই দলের বিরোধিতা

সাবেক কো–চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “বাংলাদেশে দুটি জাতীয় পার্টি থাকবে না। কোনো সিন্ডিকেটে দল বন্দী থাকবে না। জাতীয় পার্টি হবে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের দল।”

তিনি বলেন, “দেশ এখন এক অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। সময় পরিবর্তনের। পৃথিবীর সব দেশেই পরিবর্তন হয়। জাতীয় পার্টির মধ্যেও পরিবর্তনের সময় এসেছে।”

গতকাল নবনিযুক্ত মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারীর বক্তব্যের জবাবে রুহুল আমিন বলেন, “তিনি বলেছেন আমরা সিনিয়ররা বেইমানি করেছি। এতে আমি আঘাত পেয়েছি। তিনি যদি এমপি হন, তবে তার পেছনে আমার অবদানও মনে রাখা উচিত ছিল। শালীনতার সঙ্গে কথা বলা উচিত।”

মুজিবুল হক চুন্নুর অভিযোগ: “আমাদের অব্যাহতি বেআইনি”

সদ্য পদচ্যুত মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “জি এম কাদের আমাদের ১১ জনকে বেআইনিভাবে অব্যাহতি দিয়েছেন। আমরা তা মানি না। কাউন্সিলের আগ পর্যন্ত আমরা সবাই আমাদের নিজ নিজ পদে বহাল আছি।”

তিনি অভিযোগ করেন, “জি এম কাদের এককভাবে তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে দল চালাতে চাইছেন। কাউন্সিলের আগেই আমাদের সরিয়ে দিয়ে তিনি কাউকে যেন চ্যালেঞ্জ করতে না পারে, সেই ভয় থেকেই তিনি তড়িঘড়ি করে অব্যাহতির নাটক করেছেন। তবে সারা দেশের এরশাদ–প্রেমী নেতা–কর্মীরা তার সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দেবে।”

লিয়াকত হোসেন ও নুরুল ইসলাম মিলনের সংহতি

অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা এবং কুমিল্লা-৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মিলনসহ প্রায় ৩০০ নেতা-কর্মী আনিসুল, হাওলাদার ও চুন্নুর নেতৃত্বাধীন বৃহত্তর ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।

লিয়াকত হোসেন বলেন, “আমি জি এম কাদেরকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। কিন্তু তাঁর আশপাশে থাকা কিছু তথাকথিত নেতা দলকে ছোট করার ষড়যন্ত্র করছে। তারা নিজেরা সুবিধা নিতে চায়, দল বড় হোক এটা তারা চায় না।”

উপস্থিত নেতৃবৃন্দ

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সানাউল্লাহ সানু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিপন বাওয়াল, আনিসুর রহমান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি কাজী মো. মহসিন, উপদেষ্টা সরদার শাহজাহান, হারুন আর রশীদ, ভাইস চেয়ারম্যান শেখ আলমগীর হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

এই অনুষ্ঠান থেকেই স্পষ্ট হয়, জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ বিভক্তি এখন নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং দলটির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে বড় রকমের লড়াই আসন্ন।

No comments

Powered by Blogger.