নির্বাচন নিয়ে কি অবস্থান বদলাচ্ছে জামায়াত? কী বলছে বিএনপি ও এনসিপি?
দেশের রাজনীতিতে আবারও উত্তাপ দেখা দিয়েছে। ইস্যু—আসন্ন নির্বাচন। সরকারপক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে, ২০২৬ সালের নির্বাচনের সময়সীমা রোজার আগেই হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ ধরনের আভাস দিয়েছে।
এছাড়া নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বিশেষভাবে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভিন্নমত ও উদ্বেগ প্রকাশ পাচ্ছে। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জামায়াতের
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান সম্প্রতি একটি জনসভায় বলেন, দেশে বর্তমানে যে ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি বিশেষভাবে পাটগ্রাম থানায় বিএনপি কর্মী ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাটি উল্লেখ করেন।
সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা এনসিপির
এদিকে জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) এখন ঢাকার বাইরে পদযাত্রা কর্মসূচিতে ব্যস্ত। এসব কর্মসূচিতে দলটির নেতারা বারবার বলেছেন, তারা জুলাই ঘোষণাপত্র ও মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না।
জামায়াত কি নির্বাচন পেছাতে চায়?
নির্বাচন নিয়ে সংশয় শুরু থেকেই ছিল। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার বিদায় নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর বিএনপি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ দাবি করতে থাকে।
প্রধান উপদেষ্টা যখন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেন, তখন বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোট চেয়েছিল। পরে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হলে বিএনপি তাতে সম্মতি দেয়।
এই সময়জুড়ে জামায়াতে ইসলামীও নির্বাচন নিয়ে নানা বক্তব্য দিয়েছে। শুরুতে দলটি ডিসেম্বর-জুন সময়সীমা মেনে নেয়। কখনও এপ্রিল, কখনও ফেব্রুয়ারিতে ভোট চেয়েছে তারা। তবে জামায়াত নেতারা এই পরিবর্তনকে অবস্থানের পরিবর্তন বলতে নারাজ।
দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই বলেছি ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। পরে বলেছি, ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত। এটাই ধারাবাহিক অবস্থান।”
নির্বাচন ঘিরে শর্ত ও অভিযোগ
তাহের বলেন, “এখন নির্বাচনের আর ছয়-সাত মাস বাকি। এই সময়ের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু হয়নি। পাশাপাশি ডিসি, এসপি, ইউএনওদের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে এখনো দলীয় পক্ষপাতিত্ব আছে। এ অবস্থায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা দরকার ছিল, কিন্তু তা হয়নি। এমনকি নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন আছে।”
মৌলিক সংস্কার নিয়ে বিরোধ
জামায়াত বলছে, শুধু সমতল ভোটের পরিবেশ নয়, মৌলিক সংস্কার ও জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন করেই নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু সেই সংস্কার বাস্তবায়নের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের।
তাহেরের ভাষায়, “কিছু দল সংস্কার প্রক্রিয়াকে নিরুৎসাহিত করছে, ঐকমত্যের পথ আটকে দিচ্ছে। এমন একটা পরিবেশ তৈরি করছে যাতে মনে হয়, সংস্কার না করেই নির্বাচন করানোর চেষ্টা হচ্ছে।”
এনসিপির বক্তব্য আরও কঠোর
জামায়াতের পাশাপাশি এনসিপিও সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বলেছে। এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসাইন বলেন, “দেশে পরিবর্তন না হলে শুধু সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য নির্বাচন করা অর্থহীন। কেউ বলেনি নির্বাচন বন্ধ করতে হবে। কিন্তু মৌলিক পরিবর্তনের আগে নির্বাচন হলে সেটা জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে না।”
তিনি আরও বলেন, “বেশ কিছু দল সংস্কারের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। তারা বলছে, এই সরকারের হাতে সংস্কার বাস্তবায়নের ম্যান্ডেট নেই। ফলে শুধু নির্বাচনমুখী চিন্তা করে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করা হবে আত্মঘাতী।”
বিএনপির সঙ্গে বিরোধ স্পষ্ট
জামায়াত ও এনসিপি বলছে, তারা বিএনপিকে সরাসরি না বললেও, সংস্কারবিষয়ক আলোচনায় মূল বিরোধ বিএনপির সঙ্গেই। বিশেষ করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সংস্কার ও ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে মতবিরোধ স্পষ্ট।
No comments