Header Ads

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে

  


বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতির সম্ভাবনা এবং সৌদি আরবের চীনে অপরিশোধিত তেল সরবরাহ কমে যাওয়ার পূর্বাভাসের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে।

মঙ্গলবার (১০ জুন) বিজনেস রেকর্ডারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩৪ সেন্ট বা ০.৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬৭.৩৮ ডলার। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দামও ৩৩ সেন্ট বা ০.৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫.৬২ ডলারে। এর আগের দিন ব্রেন্টের দর ছিল ৬৭.১৯ ডলার, যা ২৮ এপ্রিলের পর সর্বোচ্চ।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য আলোচনা বাজারে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করেছে। লন্ডনে দ্বিতীয় দিনের মতো আলোচনা চলায় বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন।

অনিক্স ক্যাপিটাল গ্রুপের গবেষণা প্রধান হ্যারি টচিলিন গুরিয়ান বলেন, “বাণিজ্য আলোচনার বিষয়ে বাজারে একটি আশাবাদী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবাই এখন এর ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছে, আর এই প্রত্যাশাই তেলের দাম বাড়াতে সহায়তা করছে।”

গোল্ডম্যান স্যাকস-এর বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন আলোচনায় ইতিবাচক গতি এবং মার্কিন কর্মসংস্থান সংক্রান্ত সদর্থক তথ্য তেলের চাহিদা নিয়ে উদ্বেগ কমিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার (০৯ জুন) জানান, তিনি লন্ডনে অবস্থানরত তার দলের কাছ থেকে “শুধু ভালো খবর” পাচ্ছেন এবং আলোচনার অগ্রগতিতে তিনি সন্তুষ্ট।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি এই আলোচনা সফলভাবে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে উপনীত হয়, তবে তা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে এবং পণ্যের চাহিদা, বিশেষ করে তেলের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।

অন্যদিকে, সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি সৌদি আরামকো জানিয়েছে, তারা জুলাই মাসে চীনে প্রায় ৪৭ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করবে, যা জুন মাসের তুলনায় ১০ লাখ ব্যারেল কম। এই তথ্য ওপেক প্লাস জোটের উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণার পরও সরবরাহে একটি ভারসাম্যের ইঙ্গিত দেয়।

হ্যারি টচিলিন গুরিয়ান আরও বলেন, “সৌদি আরব যেহেতু বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তেল উৎপাদন করতে সক্ষম, তবুও অতিরিক্ত সরবরাহ না থাকায় বোঝা যাচ্ছে ওপেক প্লাসের উৎপাদন বৃদ্ধির ঘোষণা বাস্তবে তেমন বড় প্রভাব ফেলছে না।”

উল্লেখ্য, ওপেক প্লাস জোট, যারা বিশ্বে মোট তেলের প্রায় অর্ধেক সরবরাহ করে, জুলাই মাসের জন্য দৈনিক ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। এটি টানা চতুর্থ মাসের মতো উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ। তবে মে মাসে ওপেকের উৎপাদন বৃদ্ধি ছিল সীমিত।

রয়টার্সের এক সমীক্ষায় জানা যায়, ইরাক অতিরিক্ত উৎপাদনের ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম উৎপাদন করেছে। এছাড়া সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও অনুমোদিত সীমার চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম মাত্রায় উৎপাদন বাড়িয়েছে।

এদিকে, ইরান পারমাণবিক চুক্তি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রস্তাবকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং পাল্টা প্রস্তাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যদি ইরান যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পায়, তবে তারা তেল রপ্তানি বাড়াতে পারবে, যা বিশ্ববাজারে তেলের দামে আবারও নিম্নচাপ তৈরি করতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে তেলের বাজার একাধিক ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য আলোচনা, ওপেক প্লাসের উৎপাদন নীতি, এবং ইরানের ভূমিকাসহ বিভিন্ন বিষয় মিলে ভবিষ্যতে তেলের দামে বড় ধরনের ওঠানামার সম্ভাবনা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.