Header Ads

নির্বাচন কি সত্যিই ফেব্রুয়ারিতে হবে?

 

নির্বাচন কি সত্যিই ফেব্রুয়ারিতে হবে?



অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির মধ্যে কিছুটা ছাড় এবং সমঝোতার মাধ্যমে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়ের বিষয়ে একমত হয়েছে। বিবিসি বাংলার কাদির কল্লোলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লন্ডনে অনুষ্ঠিত প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একান্ত বৈঠক থেকে এ বার্তা এসেছে। তবে রোজা শুরুর আগে নির্বাচনে সংস্কার ও বিচারের অগ্রগতির শর্ত দুটো রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার। এই সমঝোতায় জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আপত্তি জানিয়েছে।

প্রশ্ন হলো, নির্বাচন কি সত্যিই ফেব্রুয়ারিতেই হবে? রাজনীতিতে অস্বস্তি ও অনিশ্চয়তা কি কাটবে?

নির্বাচনের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভক্তির কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লন্ডন বৈঠকের বার্তা সেই পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা রাখে। অন্তর্বর্তী সরকার কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে।

বিএনপি মনে করে, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে। লন্ডন বৈঠকের যৌথ ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদিও বিএনপিকেও ডিসেম্বরের নির্বাচন দাবিতে থেকে সরে আসতে হয়েছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে কোনো দলের নেতার বৈঠকের ভিত্তিতে যৌথ ঘোষণা দেয়ার নজির বাংলাদেশে খুব কম দেখা গেছে বলে বিশ্লেষকেরা বলছেন।

লন্ডনে বৈঠক দেড় ঘণ্টা চলে, যেখানে অধিকাংশ সময় একান্তে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে আলোচনার মধ্য দিয়ে যৌথ ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে বৈঠকে বিস্তারিত কী আলোচনা বা সমঝোতা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই যৌথ ঘোষণা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। তাদের মতে, একটি দলের সঙ্গে একতরফা আলোচনা করে নির্বাচন তারিখ নির্ধারণ অন্য সব দল ও শহীদ পরিবারের প্রতি অবমাননা। এনসিপির এ আপত্তি বিএনপি ও এর মিত্ররা গুরুত্ব দিচ্ছেনা।

বিএনপি বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে তাদের ছাত্র প্রতিনিধিরাও আছেন এবং এনসিপি বর্তমানে মানুষের কাছে খুব বেশি প্রভাবশালী নয়, তাই তারা ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন সংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্ত ও বিএনপির সঙ্গে বৈঠক নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। তারা সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন দলের মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও ফেব্রুয়ারি লক্ষ্য রেখে দেশে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যেও ধারণা গড়ে তুলবে।

কেন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে রাজি সরকার?

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস আগে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলছিলেন। পরে এপ্রিলে নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দেন, যা জামায়াত ও অন্যান্য দল স্বাগত জানিয়েছিল। তবে বিএনপি ও এর মিত্ররা তখন আপত্তি জানিয়েছিল। এই অবস্থায় সরকারে অসহযোগিতার চাপ তৈরি হয়েছিল, যা নির্বাচন প্রলম্বিত করার পথ বন্ধ করে দেয়। এখন এই চাপ বুঝে সরকার ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের কথা মেনে নিয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, সরকার প্রধান বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চান, তাই তাদের দাবি মেনে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পথ খুলে দিয়েছেন।

সরকারের ‘এক্সিট’ বা অবসর নেওয়ার প্রশ্নও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের চলাকালে বিভিন্ন দলে গোষ্ঠী কলহ, অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। এসব কারণে সরকারের অবস্থান অস্থির ছিল এবং বিদায়ের পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা ছিল। এখন লন্ডন বৈঠকের মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।

নির্বাচনে বিএনপিও ছাড় দিয়েছে কেন?

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগে বলেছিলেন, ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে হবে। তবে লন্ডনে বৈঠকে সরকার ও বিএনপির মধ্যে আলোচনা শেষে ফেব্রুয়ারির প্রস্তাবে সম্মতি এসেছে। বিএনপি এখন এটিকে তাদের রাজনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখছে, যদিও ডিসেম্বরের সময় থেকে সরে এসেছে।

বিএনপি তাদের তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিও তুলেছিল, যার একজন খলিলুর রহমানকে লন্ডন বৈঠকের পর বিএনপির আমীর খসরুর সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে দেখা গেছে। রাজনৈতিক আলোচনা অনুযায়ী, দলটি অন্য দাবিতেও কিছু ছাড় দিয়েছে।

বিএনপি মনে করে, নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা তাদের মধ্যে দৃঢ় এবং বিলম্ব হলে অশান্তির আশঙ্কা ছিল। এজন্য তারা নির্বাচন সময় নির্ধারণে চাপ প্রয়োগ ও নানা দাবি তুলেছিল।

তবে বিদেশে এক দলের নেতার সঙ্গে সরকারের যৌথ ঘোষণায় জামায়াত ও এনসিপির মতবিরোধ রয়েছে। জামায়াত সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্ন করেছে, এনসিপি সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া নির্বাচন তারিখ নির্ধারণের বিরোধিতা করেছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, এখন রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা কাটিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করাবে।

তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, কিছু দলের মধ্যে অস্বস্তি ও বিভাজন রয়ে যাবে এবং সরকারকে অন্য দলগুলোর আশ্বস্ত করতেও কঠিন হতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা বলছেন, নির্বাচনের জন্য সব দল সরকারের সহযোগিতা করবে বলে আশা রাখছেন।

No comments

Powered by Blogger.