Header Ads

লন্ডনে বৈঠকের পর কেন স্বস্তিতে বিএনপি


    

লন্ডনে বৈঠকের পর কেন স্বস্তিতে বিএনপি




 জাতীয় নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার ছিল বিএনপি। দলটি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইলেও অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছরের এপ্রিলের নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে নির্বাচনের সময়সূচি ঘিরে সংকট তৈরি হয় এবং সরকারের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক আরও বৈরী হয়ে ওঠে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই টানাপোড়েনের মধ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠক নির্বাচন ঘিরে তৈরি অনিশ্চয়তা অনেকটাই দূর করেছে এবং বিএনপির মধ্যে একধরনের স্বস্তিও ফিরিয়ে এনেছে। সেই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির চলমান উত্তেজনাও খানিকটা প্রশমিত হয়েছে। সব মিলিয়ে বৈঠকের পর বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন আত্মবিশ্বাসী ও চাঙ্গা।

বিএনপি মনে করছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যকার এই বৈঠক গণতন্ত্রের একটি বিজয়ের বার্তা নিয়ে এসেছে। দুই পক্ষ ২০২৬ সালের রমজান শুরুর আগের সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে একমত হওয়ায় দেশে নির্বাচনী প্রস্তুতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

বিএনপির নেতারা আশা করছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) এখন একটি গ্রহণযোগ্য রোডম্যাপ ঘোষণা করবে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়াও দ্রুত এগিয়ে যাবে। এতে করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হবে।

দলটির মতে, জুলাই সনদ, বিচার প্রক্রিয়া এবং কাঙ্ক্ষিত সংস্কার কাজ আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যেই দৃশ্যমান করা সম্ভব। যদিও বিচারে কিছুটা সময় লাগতে পারে, তবে জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার মামলাগুলোর কয়েকটির রায় এই সময়ের মধ্যেই ঘোষণা করা সম্ভব। সুতরাং সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে বলেই দলটি আশাবাদী।

বৈঠকের সময় ড. ইউনূস তারেক রহমানকে সম্মান দেখিয়ে নিজের আসন থেকে উঠে এগিয়ে গিয়ে তাঁকে নিয়ে আসেন। বিএনপি নেতারা মনে করেন, এই সৌজন্য আচরণের মধ্য দিয়ে সরকারের কাছে বিএনপির গুরুত্বও প্রকাশ পেয়েছে। ফলে বৈঠককে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে সন্তুষ্টি লক্ষ্য করা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বৈঠককে “ঐতিহাসিক, যুগান্তকারী ও জাতির জন্য দিকনির্দেশনামূলক” বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষ যে নির্বাচনের আশায় ছিল, সেই অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। তাঁর মতে, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এবং গণতন্ত্র আরও শক্ত ভিত্তি পাবে।

তিনি আরও বলেন, “রাজনীতি হলো আপসের শিল্প” — এই নীতির ভিত্তিতেই বর্তমান সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ড. ইউনূস বিষয়টি অনুধাবন করেছেন এবং আবহাওয়া, রমজান ও পাবলিক পরীক্ষার বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করেছেন। বিএনপি এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে এবং আশা করছে, নির্বাচন কমিশন যথাযথভাবে কাজ শুরু করবে।

বৈঠকে অর্থনীতি, রাষ্ট্র পরিচালনা ও উন্নয়নের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ড. ইউনূসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিএনপি, আর ড. ইউনূসও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, “বৈঠকটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতি ছিল উৎকণ্ঠায়। বৈঠকের পর এখন স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দেশে নির্বাচনমুখী একটি উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “এখন আমরা সেই উৎসবের অংশ হিসেবে নির্বাচনী মাঠে নামতে প্রস্তুত হচ্ছি। দেশ গড়ার কাজে সব রাজনৈতিক দলেরই বড় দায়িত্ব আছে। আশা করি সবাই সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব নেবেন।”

এ্যানি জানান, “বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া আমরা দেখেছি। দু-একটি কৌশলী মন্তব্য এলেও তা আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। সংস্কার হবে, বিচার হবে, এবং নির্বাচনও হবে।”

জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না মনে করেন, এই বৈঠক ভবিষ্যতে অনেক জটিলতার সমাধানের পথ খুলে দিয়েছে। তাঁর ভাষায়, “বৈঠকটি দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দিক থেকে একটি সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

সব মিলিয়ে, লন্ডন বৈঠকের মাধ্যমে বিএনপি এখন আত্মবিশ্বাসী। দলটি মনে করে, এই বৈঠক নির্বাচনী সংকট নিরসন ও একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।

No comments

Powered by Blogger.