Header Ads

বাজেটে ট্রাম্প ও আইএমএফের প্রভাব: আনু মুহাম্মদ


বাজেটে ট্রাম্প ও আইএমএফের প্রভাব: আনু মুহাম্মদ


 অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত বাজেটে ট্রাম্প প্রশাসন ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, “এই বাজেট ট্রাম্প ও আইএমএফ—এই দুইয়ের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে।”

শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘বাজেট: দেড় দশকের অভিজ্ঞতা ও অর্থনীতির গতিপথ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনিই।

আনু মুহাম্মদ বলেন, আইএমএফের প্রভাবে দেশের ক্ষুদ্র ও স্থানীয় শিল্পের ভ্যাট অব্যাহতি কমানো হয়েছে, কর অব্যাহতি বাতিল করা হয়েছে এবং গৃহস্থালির পণ্যের ওপর কর আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া অনলাইনে পণ্য বিক্রির ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করে সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই চাপ আরও বেড়েছে ট্রাম্প প্রশাসনকে খুশি করার তাড়নায়। তার ভাষায়, ট্রাম্পের ট্যারিফ নীতির ঘোষণার পর তাঁর প্রশাসনকে সন্তুষ্ট করতে সরকার তড়িঘড়ি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যার ফলে বাজেটে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

আনু মুহাম্মদ বলেন, বাজেট হওয়া উচিত ছিল ধনী শ্রেণি থেকে সম্পদ আহরণ করে তা পুনর্বণ্টনের মাধ্যমে সামাজিক ভারসাম্য আনার দিকে। কিন্তু এবার বাজেটে তার উল্টো চিত্র দেখা গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেটেও আগের সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাজেটে তার প্রতিফলন নেই।

তিনি বলেন, বাজেটের শিরোনামে ‘উন্নয়ন’ বলা হলেও এর ভেতরের কাঠামোতে রয়েছে জনগণের জন্য নানা সংকট ও ঝুঁকি। বাজেটে যেন অস্বচ্ছতা ও প্রতারণামূলক ঘোষণা না থাকে, সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ২২ জুন বাজেট পাসের আগে সরকারের উচিত বড় ভুলগুলো সংশোধন করা এবং জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাস্তবধর্মী উদ্যোগ নেওয়া।

সভায় গবেষক মাহতাব উদ্দীন আহমেদ মূল প্রবন্ধে তুলে ধরেন, গত ১৬ বছরের বাজেট জনগণের হয়ে ওঠেনি। তার ভাষায়, গত দেড় দশকের বাজেটে সাতটি বড় সমস্যা দেখা গেছে—স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাজেটের ব্যবহার, জনগুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ হ্রাস, গরিবের ওপর করের বোঝা, অর্থ লুটপাট, জনগণের প্রতি হুমকি এবং উন্নয়ন ব্যয়ের প্রতি আস্থার সংকট।

লেখক ও গবেষক কল্লোল মোস্তফা বলেন, দেশের বিদ্যমান করব্যবস্থা বৈষম্যমূলক, এবং এবারের বাজেটে সেটিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। একইভাবে, সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থায়ও নতুন কোনো অগ্রগতি নেই। তিনি জানান, পেনশন, কৃষি ভর্তুকি, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণকে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে এগুলো সেই শ্রেণিতে পড়ে না। এসব বাদ দিলে জিডিপির অনুপাতে এই খাতে বরাদ্দ এক শতাংশেরও কম।

গবেষক ও শিক্ষক মাহা মির্জা বলেন, গত পাঁচ দশকে দেশে কাঙ্ক্ষিত হারে শিল্পায়ন হয়নি। সরকারি খাতের তুলনায় বেসরকারি খাতে ১৭ গুণ বেশি বরাদ্দ দেওয়া হলেও সে অনুযায়ী শিল্প খাতে উন্নয়ন হয়নি। বরং সেখানে ব্যাপক অর্থ লুটপাট হয়েছে।

তিনি বলেন, কৃষি খাতে বাজেট বরাদ্দ জিডিপির ৫ শতাংশেরও কম। কৃষি খাত আজ বিপর্যস্ত, কিন্তু বাজেটে তা মোকাবিলায় কার্যকর কোনো সমাধান আনা হয়নি।

সভায় আরও বক্তব্য দেন চিকিৎসক হারুণ অর রশিদ ও গবেষক গোলাম রসুল। তাঁরা গত দেড় দশকে স্বাস্থ্য, কৃষি ও অন্যান্য জনকল্যাণমূলক খাতে বাজেট বৈষম্য নিয়ে আলোচনা করেন।

No comments

Powered by Blogger.