Header Ads

হোসেইন সালামিকেই কেন টার্গেট করল ইসরায়েল

  

হোসেইন সালামিকেই কেন টার্গেট করল ইসরায়েল




ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি শুক্রবার (১৩ জুন) ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। এই হামলা চালানো হয় ইরানের রাজধানী তেহরানে সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বে এক বিপজ্জনক নতুন পর্বের সূচনা করেছে।


সামরিক ও কৌশলগত নেতৃত্বে সালামি

হোসেইন সালামি ছিলেন ইরানের অন্যতম প্রভাবশালী সামরিক নেতা। তার জন্ম ১৯৬০ সালে ইসফাহান প্রদেশের গোলপায়েগানে। ১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীতে যোগ দেন, তখন তিনি কলেজের ছাত্র ছিলেন। যুদ্ধে সাহসিকতা ও নেতৃত্বের গুণে তিনি দ্রুত পদোন্নতি পান।

তিনি আইআরজিসির কারবালা ও ইমাম হোসেন ডিভিশনের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরে নৌবাহিনীর ‘নুহ সদর দপ্তরের’ নেতৃত্বে ছিলেন।


শিক্ষা ও সামরিক পরিকল্পনা

যুদ্ধ শেষে সালামি সামরিক স্টাফ কলেজ থেকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনায় মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৭ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত আইআরজিসির অপারেশন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়েই ইরানের সামরিক কৌশল ও নীতির একটি শক্ত ভিত গড়ে ওঠে।

২০১৯ সালে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি তাকে আইআরজিসির প্রধান কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেন। এই পদ তাকে সামরিক কাঠামোতে ইরানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তিতে পরিণত করে।


আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও সমালোচনার মুখে

সালামির নেতৃত্বে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। এ কারণে তিনি একাধিকবার আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েন।

  • ২০০৬ সালে জাতিসংঘ,

  • ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র,

  • ২০২১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন
    তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

এছাড়া, ২০২৩ সালে ফ্রান্সে তার বিরুদ্ধে মাহসা আমিনি আন্দোলন দমন এবং হত্যার হুমকির অভিযোগ আনা হয়।


কঠোর মতাদর্শ ও যুদ্ধনীতি

সালামি ছিলেন একজন কট্টর মতাদর্শের ধারক। তিনি নিয়মিতভাবে ইসরায়েল ধ্বংসের আহ্বান জানাতেন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে কঠোরভাবে সমালোচনা করতেন।
তার উক্তি: “আমাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রই আমেরিকান রণতরীগুলোর শেষকথা হবে।”

২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে, দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার জবাবে ইরান প্রথমবারের মতো সরাসরি ইসরায়েলে ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালায়। এই অভিযানের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন সালামি।


আইআরজিসি-র প্রভাব ও শক্তি

আইআরজিসির প্রধান হিসেবে সালামি এমন এক সংস্থার নেতৃত্বে ছিলেন, যার নিজস্ব সেনাবাহিনী, বিমান ও নৌবাহিনী, গোয়েন্দা ইউনিট এবং আনুমানিক ২ লাখ সদস্য রয়েছে।
তাছাড়া, আইআরজিসি ইরানের নির্মাণ, টেলিকম, তেল ও গাড়ি শিল্পেও বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।

এই প্রতিষ্ঠান কেবল একটি সামরিক বাহিনী নয়, বরং ইরানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামোরও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।


ইসরায়েলের হামলা ও তাৎপর্য

১৩ জুন শুক্রবার ভোররাতে ইসরায়েল তেহরানে একটি বড় সামরিক অভিযান চালায়। ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে চালানো এই হামলায় হোসেইন সালামি ছাড়াও বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, এই হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা রোধ করা।

ইরান পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ১০০টিরও বেশি ড্রোন ইসরায়েলের দিকে পাঠায়। তবে ইসরায়েল তার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সেগুলোর অধিকাংশই ভূপাতিত করে।


ইরানের প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

সালামির মৃত্যুর পর আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, “ইসরায়েলকে কঠিন প্রতিশোধের মুখোমুখি হতে হবে।”

আইআরজিসি এক বিবৃতিতে জানায়, সালামি ছিলেন ইসলামি বিপ্লবের একজন বীর, এবং তার পথ অনুসরণ করা হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে এবং এতে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.