Header Ads

১১ হাজার কনটেইনার পণ্য খালাস না হওয়ায় ছুটিতে জমেছে

 

১১ হাজার কনটেইনার পণ্য খালাস না হওয়ায় ছুটিতে জমেছে



গত মে মাসে কাস্টমস কর্মকর্তাদের কলমবিরতি ও পরিবহন ধর্মঘটে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজট তৈরি হয়। এরপর ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে টানা ছুটিতে পড়ায় বন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রম আরও ব্যাহত হয়। যদিও ছুটির সময় বন্দরের কার্যক্রম আংশিক চালু ছিল, তারপরও আমদানিকারকেরা যথাসময়ে পণ্য খালাস করতে পারেননি। ফলে বন্দরে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনারের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। এখন দ্রুত খালাস কার্যক্রম না বাড়ালে এই জট আরও বাড়তে পারে এবং বন্দরসেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে বন্দরের ধারণক্ষমতার ৮০ শতাংশ জায়গা কনটেইনারে ভরপুর। প্রতি ঘণ্টায় এই জায়গা আরও সংকুচিত হচ্ছে। ধারণক্ষমতা কমে গেলে খালাস ও অন্যান্য কার্যক্রমে ধীরগতি দেখা দেয়। এতে ব্যবসায়ীদের হাতে পণ্য পৌঁছাতে সময় বেশি লাগে।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৫ জুন থেকে ১০ দিনের ছুটি শুরু হয়। এই সময়ে শুধু ঈদের দিন একটি পালা বন্ধ ছিল, বাকি সময় জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানামার কাজ চলেছে। তবে কাস্টমস ও অন্যান্য সংস্থার সীমিত কার্যক্রম এবং পরিবহনসহ নানা সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা যথারীতি পণ্য খালাস করতে পারেননি। এতে কনটেইনার জমা বাড়তে থাকে।

বন্দরের হিসাব অনুযায়ী, ৪ জুন পর্যন্ত বন্দরে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার ছিল ২৮ হাজার। ১৩ জুন বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজারে। অর্থাৎ মাত্র সাত দিনেই জমেছে ১১ হাজার অতিরিক্ত কনটেইনার।

এই সময়কালে বন্দরে মোট ২৪ হাজার কনটেইনার নামানো হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা খালাস করেছেন মাত্র সাড়ে ৯ হাজার কনটেইনার। ফলে অবশিষ্ট সাড়ে ১৪ হাজার কনটেইনার বন্দরে জমে রয়েছে। যদিও কিছু খালি কনটেইনার সরিয়ে কিছুটা জায়গা ফাঁকা করা হয়েছে, তারপরও জট কমছে না।

চট্টগ্রাম বন্দরের মুখপাত্র মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ঈদের ছুটির মধ্যেও বন্দর সচল ছিল এবং জট ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে আমদানিকারকেরা দ্রুত পণ্য খালাস না করলে সংকট বাড়তে পারে।

সাধারণ সময়ে বন্দরে প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজারের বেশি কনটেইনার খালাস হয়। কিন্তু ছুটির এই সাত দিনে গড়ে মাত্র ১ হাজার ৩৭৭ কনটেইনার খালাস হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় খালাস হয়েছে প্রায় ২ হাজার কনটেইনার। কর্মকর্তারা মনে করছেন, খালাসের হার দিনে অন্তত ৫ হাজারে না উঠলে এই জট কমবে না।

এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বন্দর খোলা থাকলেও খালাস কার্যক্রম অনেক সংস্থার ওপর নির্ভরশীল। কাস্টমস ও অন্যান্য অনুমোদন সংস্থাগুলোর সীমিত কার্যক্রমের পাশাপাশি পরিবহন সংকট এবং কর্মীর অভাবও বড় সমস্যা ছিল। ফলে ছুটিতে স্বাভাবিক গতিতে পণ্য খালাস সম্ভব হয়নি।

এদিকে, জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানামার কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকায় রপ্তানির কনটেইনার সময়মতো বন্দর ছেড়েছে। তাই জাহাজজটও তেমন একটা বাড়েনি। ছুটি শুরুর আগে বন্দরের জেটিতে ভেড়ার অপেক্ষায় ছিল ১৬টি জাহাজ, যা বৃহস্পতিবার নেমে এসেছে ১২টিতে। প্রতিদিন ১০–১১টি জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানামা অব্যাহত ছিল।

এখন ঈদের ছুটি শেষে সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরগুলো রোববার থেকে পুরোদমে চালু হবে। তখন কনটেইনার খালাস দ্রুত না বাড়ালে বন্দরে দীর্ঘমেয়াদি জটের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.