বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে
আজ শুক্রবার ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। এর প্রভাব পড়েছে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের বাজারে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এতে তেলের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম দ্রুত বেড়ে গেছে। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচার্সের দাম ৯.০৭ শতাংশ বা ৬.২৯ মার্কিন ডলার বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৭৫.৬৫ ডলারে দাঁড়িয়েছে। একসময় এই দাম ৭৮.৫০ ডলারে পৌঁছে যায়, যা গত ২৭ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ।
অন্যদিকে, মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬.৪৩ ডলার বা ৯.৪৫ শতাংশ বেড়ে ৭৪.৪৭ ডলারে ওঠে। কিছু সময়ের জন্য এটির দাম ৭৭.৬২ ডলারে পৌঁছায়, যা ২১ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ।
বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার মানে হচ্ছে—খাবারের দাম, পরিবহন ব্যয়, এবং গ্যাস ও তেলের খরচ বাড়বে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য এটি হবে দুশ্চিন্তার কারণ।
একজন জ্বালানি ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেন, “এই মুহূর্তে কেউ নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছে না, তবে হরমুজ প্রণালি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় সবাই উদ্বিগ্ন।”
হরমুজ প্রণালি হলো বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথ। এখানে দিয়ে প্রতিদিন বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ জ্বালানি তেল সরবরাহ হয়। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো—যেমন সৌদি আরব, ইরাক, কুয়েত ও ইরান—তাদের তেল ও গ্যাস এই পথেই রপ্তানি করে। প্রণালিটির উত্তরে ইরান, দক্ষিণে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত অবস্থিত। এটি উপসাগরীয় অঞ্চলকে আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করে।
জ্বালানি বিশ্লেষক সল কাভোনিক, যিনি এমএসটি মারকুই নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, বলেন—“বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরান যদি আঞ্চলিক জ্বালানি অবকাঠামোতে পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে বিশ্বজুড়ে জ্বালানির সরবরাহে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।” তিনি আরও বলেন, যদি ইরান হরমুজ প্রণালিতে জাহাজ চলাচলে বাধা দেয়, তাহলে প্রতিদিন প্রায় ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পরিবহন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলার কঠিন জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তেহরান। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, “ইসরায়েলকে এই হামলার জন্য কঠোর শাস্তি পেতে হবে।”
অন্যদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবে জড়িত নয় এবং এটি ইসরায়েলের একতরফা সিদ্ধান্ত। তবে তিনি ইরানকে সতর্ক করে বলেন, “তারা যেন মার্কিন স্বার্থ কিংবা মার্কিন নাগরিকদের লক্ষ্য না করে।”
ফিলিপ নভার জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক প্রিয়াঙ্কা সচদেবা রয়টার্সকে জানান, “ইরান পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা শুধু জ্বালানি তেলের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাবে না, বরং পুরো অঞ্চলের অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যেও উত্তেজনা বাড়িয়ে দেবে।”
এই অবস্থায় বিশ্ববাজারে তেলের দামে অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
No comments