১৯৭৩ সালের পর মার্কিন ডলারের সবচেয়ে বড় সংকট
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিশ্ববাজারে মার্কিন ডলারের একটি ঐতিহাসিক পতন ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোর মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মান ১০ শতাংশের বেশি কমেছে। এমন বড় ধরনের দরপতন সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৭৩ সালে, যখন যুক্তরাষ্ট্র স্বর্ণমান পরিত্যাগ করেছিল।
তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। ডলারের এই পতনের পেছনে রয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী অর্থনৈতিক নীতি। এর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্যে একতরফা শুল্ক আরোপ, এককেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি এবং ক্রমবর্ধমান সরকারি ঋণ। এসব কারণে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির প্রতি আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতিতে কঠোর শুল্ক আরোপ, উচ্চ মূল্যস্ফীতির শঙ্কা এবং লাগামহীন সরকারি ব্যয়—সব মিলিয়ে ডলারের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্বে আস্থার অভাবও বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
ডলারের মান কমে যাওয়ায় মার্কিন নাগরিকদের জন্য বিদেশ সফর এখন আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে এমন এক সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে।
তবে ডলারের এই দুর্বলতা কিছু ক্ষেত্রে মার্কিন রপ্তানিকারকদের জন্য সুবিধাজনক হয়েছে। কারণ, ডলার সস্তা হলে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে ওঠে। তবে আমদানি ব্যয় বাড়ায় সামগ্রিক অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসন কিছুটা নীতিগত নমনীয়তা দেখালেও ডলারের মান পতনের ধারায় রয়েছে। তবে একই সময় শেয়ারবাজার ও বন্ডবাজারে ইতিবাচক গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা গবেষক স্টিভ ইংল্যান্ডার মন্তব্য করেন, "ডলার শক্তিশালী কিনা, সেটাই মুখ্য নয়; মূল প্রশ্ন হলো বিশ্ব ডলারকে কীভাবে দেখছে।"
ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা ধারণা করেছিলেন, তার প্রশাসন ব্যবসাবান্ধব হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহ দেবে। সে কারণে অনেকে ডলারের চাহিদা বাড়বে বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টোটা।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্প শপথ নেওয়ার সময় ডলার সূচক সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছালেও এরপর থেকেই ডলারের ধারাবাহিক পতন শুরু হয়। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যবসাবান্ধব আশার জায়গা থেকে তৈরি হয় মূল্যস্ফীতি ও উচ্চ সুদের আশঙ্কা।
২ এপ্রিল ট্রাম্প এক ঘোষণায় একাধিক দেশের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যা ছিল বেশ অপ্রত্যাশিত। এর ফলে শেয়ারবাজার, বন্ডবাজার এবং বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়।
এই পরিস্থিতি শুধু ডলারের দুর্বলতাকেই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্ব, আর্থিক নীতি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পতন সাময়িক নয় বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে পারে।
No comments