সৎ উদ্দেশ্য থাকলে পিআর নির্বাচনে আপত্তির প্রশ্নই আসে না
প্রচলিত নির্বাচনী পদ্ধতির পরিবর্তে পিআর (প্রতিনিধিত্বমূলক) পদ্ধতির নির্বাচনই জনগণের প্রকৃত সরকার ও সংসদ গঠনে সহায়ক—এ মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
রোববার (৬ জুলাই) পবিত্র আশুরা উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে কোনো দল যদি ৫১ শতাংশ ভোট পায়, তবে তারা সরকার গঠন করে। অথচ অন্য দলগুলো ৪৯ শতাংশ ভোট পেলেও সেটার কোনো মূল্যায়ন হয় না। কিন্তু পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটি ভোটের মূল্যায়ন হয়, এবং সেই অনুযায়ী সরকার ও সংসদ গঠিত হয়। এতে একক কোনো দল স্বৈরাচারী কিংবা ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে পারে না।
তিনি অভিযোগ করেন, কেউ কেউ ক্ষমতায় গিয়ে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার সুযোগ হারানোর ভয়ে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চায় না। কিন্তু সৎ উদ্দেশ্য থাকলে এই পদ্ধতির বিরোধিতা করার কারণ নেই।
আলোচনা সভায় আশুরার তাৎপর্য তুলে ধরে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আশুরার শিক্ষা হলো খেলাফত প্রতিষ্ঠা। ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ একসাথে চলতে পারে না। কারণ জাতীয়তাবাদ বিচার-বিবেচনায় জাতিসত্তাকে প্রাধান্য দেয়, যা ইসলামী ন্যায়ের পরিপন্থী। ইসলামে কোনো বৈষম্য নেই। মহানবী (সা.) বলেছেন, তাঁর কন্যা ফাতিমাও যদি অপরাধ করতেন, তবে তিনি তারও শাস্তি দিতেন।
তিনি বলেন, ইসলামি শাসনব্যবস্থায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে সংগ্রাম করতে হবে। জনগণ জানে কারা সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। যদি কেউ ‘জুলাই চেতনা’ নস্যাৎ করার চেষ্টা করে, তবে ছাত্র-জনতা আবারো রাস্তায় নামবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান।
সভায় আরও বক্তব্য দেন:
অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন – কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা-৮ আসনে মনোনীত প্রার্থী
কবির আহমেদ – শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও ঢাকা-৯ আসনে প্রার্থী
মো. শামছুর রহমান – কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ইসলামি খেলাফত ব্যবস্থায় পরিবারতন্ত্র বা রাজতন্ত্রের কোনো স্থান নেই। পরিবারতন্ত্রের কারণেই স্বাধীনতার পর এত বছরেও জনগণ শোষণের শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, “রাসূল (সা.) বলেছেন, অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য বলা জেহাদ।”
তিনি দাবি করেন, জুলাই মাসে ছাত্র-জনতা স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শাহাদাতের তামান্নায় রাস্তায় নেমেছিল, লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল। সে সময় সরকার দলবল নিয়ে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য শুধু একটি নির্বাচনের জন্য ছিল না। ‘জুলাই চেতনা’ ছিল বৈষম্যহীন, ন্যায়ের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠনের ডাক। এই চেতনা বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের সব স্তরে সংস্কার দরকার। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সব খুন, গুম, নির্যাতনের বিচার করতে হবে।
নূরুল ইসলাম বুলবুল আরও বলেন, সংস্কার ও ন্যায়বিচারের পাশাপাশি জনগণের কষ্ট লাঘবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রয়োজন। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন দিয়ে জনগণের ভোটের যথার্থ মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের অনুপযুক্ত পরিবেশের জন্য একটি দল সরাসরি দায়ী। তারা থানা ভাঙচুর, আসামি ছিনতাই এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।
অপরদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ শান্তিপ্রিয় রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগে সহযোগিতা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলীয় স্বার্থে নয়, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নতুন বাংলাদেশ গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোকে কাজ করতে হবে।
No comments