জুলাইয়ে আহতদের জন্য ঢাকায় ফ্ল্যাট বরাদ্দ
জুলাই গণ–অভ্যুত্থনে গুরুতর আহতদের জন্য এবার ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনে সরকারি জমিতে ১ হাজার ৫৬০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা, যা সম্পূর্ণভাবে সরকারি কোষাগার থেকে দেওয়া হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ এবং কাজ শেষ হবে ২০২৯ সালের মধ্যে।
প্রতিটি ফ্ল্যাট হবে ১ হাজার ২৫০ বর্গফুটের। থাকবে দুটি শয়নকক্ষ, একটি ড্রয়িংরুম, একটি লিভিং রুম, একটি খাবার কক্ষ, রান্নাঘর ও তিনটি টয়লেট। বিশেষভাবে একটি কক্ষ থাকবে আহত ব্যক্তির জন্য, যারা পঙ্গু বা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। সেখানে তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় সব সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। ভবনের ডিজাইনেও থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা, যাতে চলাচলে সুবিধা হয়।
এ প্রকল্পের পাশাপাশি শহীদদের পরিবারকেও বিনা মূল্যে ফ্ল্যাট দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মিরপুর ১৪ নম্বর সেকশনে ৮০৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণে ব্যয় হবে ৭৬২ কোটি টাকা। প্রতিটি ফ্ল্যাট হবে ১ হাজার ৩৫৫ বর্গফুটের।
আহতদের জন্য ফ্ল্যাট কারা পাবেন, তা এখনও নির্ধারিত হয়নি। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. নুরুল বাসির জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সেই অনুযায়ী তালিকা তৈরি করা হবে। এই তালিকা তৈরি করবে জুলাই অধিদপ্তর, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয় যৌথভাবে।
৭ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনে ‘ঢাকার মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কর্মক্ষমতা হারানো জুলাই যোদ্ধা পরিবারের স্থায়ী বাসস্থান প্রদানে আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের মূল্যায়ন সভা (পিইসি) হয়। সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের প্রাথমিক সম্মতি দেওয়া হয়। আশা করা হচ্ছে, জুলাই মাসের মধ্যেই শহীদ ও আহতদের জন্য নেওয়া উভয় প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে।
তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যে জমিতে ফ্ল্যাট তৈরি হবে, সেটি নিচু হওয়ায় আগে সেখানে ভবন নির্মাণ সম্ভব হয়নি। এখন ওই জমি উন্নয়নে প্রায় ১২ কোটি টাকার মাটি ভরাট করতে হবে। এছাড়া সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, ৫০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের প্রকল্প গ্রহণের আগে সমীক্ষা করা বাধ্যতামূলক হলেও এই প্রকল্পে তা করা হয়নি।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জুলাই আন্দোলনে ‘ক’ শ্রেণিতে অতি গুরুতর আহত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন ৪৯৩ জন এবং ‘খ’ শ্রেণিতে গুরুতর আহত হয়েছেন ৯০৮ জন। সব মিলিয়ে গুরুতর আহতের সংখ্যা ১ হাজার ৪০১ জন। শহীদ ঘোষণা করা হয়েছে ৮৩৪ জনকে।
সরকার এরই মধ্যে শহীদ ও আহতদের পরিবারকে এককালীন অর্থ সহায়তা এবং মাসিক ভাতা দিয়ে সহযোগিতা করছে। এবার তাঁদের জন্য স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হলো।
জুলাই আন্দোলনে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন ১৯ জন এবং এক চোখ নষ্ট হয়েছে ৩৮২ জনের। অনেকেই পা হারিয়েছেন, স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়েছেন। তাই ফ্ল্যাটগুলো হবে প্রতিবন্ধীবান্ধব, যাতে তাঁরা ভবনে সহজে চলাচল ও বসবাস করতে পারেন। মিরপুর হাউজিং এস্টেটের নিজস্ব জমিতে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ মোট ১৫টি ভবন নির্মাণ করবে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোর প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলতা ও মানবিক দায়িত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।
No comments