Header Ads

১৬ বছরের আন্দোলন–সংগ্রাম কি বিএনপির জন্য ব্যর্থতায় রূপ নিচ্ছে?

 
                  

১৬ বছরের আন্দোলন–সংগ্রাম কি বিএনপির জন্য ব্যর্থতায় রূপ নিচ্ছে?



পুরান ঢাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা–কর্মী জড়িত থাকায় দলটি বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পাঁচ নেতা–কর্মীকে আজীবন বহিষ্কার করা হলেও বিএনপিকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে।

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের পর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে দখল, খুন, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার, এমনকি দলীয় পদ নিয়েও সংঘর্ষের অভিযোগ বেড়েছে। এতে দলের শীর্ষ নেতারা ইতিমধ্যে বিব্রত।

যদিও বিএনপির নেতারা বারবার বলে আসছেন, দুষ্কৃতকারীদের দায় দল নেবে না—তবুও বেপরোয়া কিছু নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ড দলটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। লাল চাঁদের হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার পর বিএনপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, নিন্দা এবং বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে।

এই পরিস্থিতিতে বিএনপি তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড দেশের মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। যদি এই ঘটনার বিচার না হয়, তাহলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি সমাজকে আরও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেবে।

এমনকি সাত হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বহিষ্কার, পদাবনতি, কমিটি বাতিলসহ নানা ব্যবস্থা নেওয়ার পরও দলের নিয়ন্ত্রণহীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, অনেক অপরাধী ও সন্ত্রাসী নানা পথে সংগঠনে ঢুকে পড়তে পারে, কিন্তু তাদের অপরাধের দায় দল নেবে না। তিনি জানান, কেন্দ্রীয়, জেলা, মহানগর এবং থানা পর্যায়ে প্রায় সাত হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, বিএনপি কোনো অপরাধীর পক্ষ নেয়নি—বরং দল শাস্তি দিয়েছে এবং প্রশাসনকেও ব্যবস্থা নিতে বলেছে।

শুদ্ধি অভিযান ও সতর্কতা

লাল চাঁদ হত্যার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে শুদ্ধি অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অতীতে খারাপ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের প্রতি সতর্ক নজর রাখতে বলা হয়েছে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি দায়িত্ব এড়ায়নি। দল অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। অথচ তারপরও কিছু মহল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপিকে ঘিরে হীন রাজনীতি করছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘তারেক রহমান কি রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন? তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগান কেন?’

নেতৃত্বের ঘাটতি ও মনোনয়ন নিয়ে অস্পষ্টতা

বিএনপির ভেতরের কেউ কেউ মনে করেন, যেসব এলাকায় যোগ্য নেতৃত্ব নেই কিংবা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছে, সেসব এলাকায় নেতাকর্মীরা বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। সেখানে যাচাই-বাছাই না করেই অনেককে দলে নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির এক নেতা বলেন, যাঁরা এসব অপরাধ করছেন, তাঁরা দলের মূল নেতৃত্বে নেই। হয়তো কোনো কমিটিতে একসময় ছিলেন, কিন্তু তাঁদের জন্য দলের দীর্ঘ ১৬ বছরের সংগ্রাম ও ত্যাগ মাটি হচ্ছে।

ভুয়া সংগঠন ও চাঁদাবাজির অভিযোগ

এদিকে, আল ইবাদত নামে একজন ব্যক্তি ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ব্যবসায়ী দল’ নামে একটি ভুঁইফোড় সংগঠন বানিয়ে হোটেল ভিক্টোরিতে অফিস খুলেছিলেন। বিএনপির নাম ব্যবহার করে তিনি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করতেন। বিএনপির নেতা আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী পল্টন থানায় এই বিষয়ে মামলা করলে পুলিশ আল ইবাদতকে গ্রেপ্তার করে।

বেপরোয়া হয়ে ওঠার পেছনের কারণ

বিএনপির অনেক নেতাই মনে করছেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় দলের ভেতরে হঠাৎ করে টাকা বানানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের আমলে দুর্নীতি ও লুটপাট দেখে অনেকেই উৎসাহিত হয়েছেন। তাই দলের বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষমতা ও প্রভাব কাজে লাগিয়ে চাঁদাবাজি, দখল, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণের মতো কাজ চলছে। যেখানে বাধা আসছে, সেখানেই সহিংসতা হচ্ছে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সমাজে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ অপশাসনের কারণে দুর্বৃত্তায়ন ছড়িয়ে পড়েছে। বিএনপির ভেতরেও তা ঢুকে গেছে। এর সমাধানে শুদ্ধি অভিযান ও প্রেরণাদায়ী কর্মসূচির বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.