Header Ads

ধর্ম এখন ভারতে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকার বিশাল বাজারে পরিণত হয়েছে

                   

ধর্ম এখন ভারতে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকার বিশাল বাজারে পরিণত হয়েছে

এক সময় ধর্ম ও জ্যোতিষশাস্ত্রকে শুধু প্রাচীন ও রক্ষণশীল ধারণা হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু আজকের ভারতে, বিশেষ করে ‘জেনারেশন জেড’ বা নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই দুই বিষয়ের চাহিদা নতুন মাত্রা পেয়েছে। প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সমন্বয়ে ভারতের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক বাজারের আকার পৌঁছেছে প্রায় ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকায়। এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই চমকপ্রদ তথ্য।

ধর্মের আধুনিক রূপ: ডিজিটাল স্পিরিচুয়ালিটি

বর্তমান প্রজন্ম প্রযুক্তিনির্ভর। তারা ধর্ম মেনে চলে ঠিকই, তবে সেটা তাদের নিজস্ব আধুনিক পদ্ধতিতে। মন্দিরে গিয়ে পূজা দেওয়ার চেয়ে এখন অনেকেই স্মার্টফোনে অ্যাপ ব্যবহার করে জ্যোতিষ পাঠ বা ভার্চুয়াল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে। ভারতের তরুণ প্রজন্মের কাছে এটাই এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

● ডিজিটাল জ্যোতিষ চর্চা:

জন্মকুণ্ডলী তৈরি, রাশিফল বিশ্লেষণ বা ভাগ্য গণনার মতো কাজ এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর অ্যাপে সহজেই করা যায়। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এসব অ্যাপ ব্যবহার করে পরামর্শ নিচ্ছেন।

● সোশ্যাল মিডিয়ায় আধ্যাত্মিকতা:

ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে অনেক তরুণ এখন ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক কনটেন্ট তৈরি করছে। সহজ ভাষা, আকর্ষণীয় উপস্থাপনা ও সংক্ষিপ্ত ভিডিওর মাধ্যমে এই কনটেন্টগুলো দ্রুত ভাইরাল হচ্ছে এবং তরুণ প্রজন্মকে ধর্মের সঙ্গে যুক্ত করছে।

● ভার্চুয়াল পূজা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান:

বিশেষ করে কোভিড-পরবর্তী সময়ে ভার্চুয়াল মন্দির, অনলাইন পূজা বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দূরে থেকেও মানুষ এসব আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারছে, ফলে ধর্মচর্চা আরও সহজ ও সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে উঠছে।


কেন জেনারেশন জেড এই পরিবর্তনের চালিকাশক্তি?

১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া ‘জেনারেশন জেড’ বড় হয়েছে বৈশ্বিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও জলবায়ু সংকটের মধ্যে দিয়ে। মানসিক প্রশান্তি ও নিরাপত্তার খোঁজে তারা ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার প্রতি নতুনভাবে আকৃষ্ট হচ্ছে।

● ব্যক্তিকেন্দ্রিক অভিজ্ঞতার আকাঙ্ক্ষা:

এই প্রজন্ম এমন ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা চায় যা তাদের ব্যক্তিগত জীবনের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক। AI এবং কাস্টমাইজড অ্যাপ এই চাহিদা পূরণে সহায়ক।

● কমিউনিটি ও সংযোগ:

অনলাইন গ্রুপ, সরাসরি প্রশ্নোত্তর ও ভার্চুয়াল আধ্যাত্মিক গুরুর সঙ্গে যুক্ত থাকার মাধ্যমে তারা ধর্মীয় আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে।

● পুরোনো ও নতুনের সমন্বয়:

তারা প্রাচীন ধর্মীয় জ্ঞানকে আধুনিক মনস্তত্ত্ব, মাইন্ডফুলনেস ও মেডিটেশনের সঙ্গে মিলিয়ে নিচ্ছে, যা ধর্মচর্চাকে আরও ব্যতিক্রমী ও অর্থবহ করে তুলছে।


অর্থনীতিতে এর প্রভাব

এই পরিবর্তন কেবল সংস্কৃতিগত নয়, অর্থনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলছে। ভারতে ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা এখন এক বিশাল শিল্পখাত হিসেবে গড়ে উঠেছে।

  • জ্যোতিষভিত্তিক অ্যাপ ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে তৈরি হয়েছে হাজার কোটি টাকার বাজার।

  • পূজার সামগ্রী, পবিত্র রত্ন ও ধর্মীয় পণ্য অনলাইনে ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে।

  • সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক ধর্মীয় কনটেন্ট, ওয়েবিনার ও ভার্চুয়াল ইভেন্ট থেকেও আয় হচ্ছে।

  • ভার্চুয়াল তীর্থযাত্রা এবং অনলাইন ধর্মীয় অভিজ্ঞতা পর্যটন খাতেও নতুন মাত্রা এনেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের ধর্ম ও আধ্যাত্মিক অর্থনীতি বর্তমানে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। যার অন্যতম চালকশক্তি হলো জেনারেশন জেডের ডিজিটাল ধর্মচর্চা।

No comments

Powered by Blogger.