এসএসসির খারাপ ফলাফলের পেছনে যে ৩টি বড় কারণ
এ বছর দেশের নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হয়েছে। কমেছে গড় পাসের হার ও জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। একই সঙ্গে বেড়েছে শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, আর কমেছে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান।
ফল খারাপের তিনটি কারণ
ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তিনটি মূল কারণে এবার ফল খারাপ হয়েছে—
১. করোনা ও অন্যান্য কারণে ক্লাস হয়নি পর্যাপ্ত পরিমাণে।
২. গণিতে পাসের হার ছিল তুলনামূলকভাবে কম।
৩. উত্তরপত্র মূল্যায়নে ছিল বাড়তি কড়াকড়ি।
গতকাল বৃহস্পতিবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। নয়টি সাধারণ বোর্ডে অংশ নিয়েছিল ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩১০ জন। পাস করেছে ১০ লাখ ৬ হাজার ৫৫৪ জন। গড় পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৬৮.০৪ শতাংশ, যেখানে গতবার ছিল ৮৩.৭৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ১৮ জন, যা গত বছরের তুলনায় ৩৮ হাজার ৮২৭ কম।
ক্লাস না পাওয়া বড় কারণ
এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা ২০২০ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। ওই বছর করোনা মহামারির কারণে মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়, যা টানা দেড় বছর স্থায়ী ছিল। ২০২২ সালে দ্বিতীয় দফায়ও এক মাসের জন্য বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেও নিয়মিত ক্লাস হয়নি।
ফলে শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত ক্লাস না করেই উচ্চ শ্রেণিতে উঠে গিয়ে এবার পরীক্ষায় অংশ নেয়। এটি তাদের শেখার প্রক্রিয়ায় বড় ঘাটতির কারণ হয়েছে।
গণিতে পাসের হার সবচেয়ে কম
এ বছর পরীক্ষার্থীদের পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। কিছু বিষয়ের প্রশ্ন কঠিন হওয়ায় বিশেষ করে গণিতে পাসের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ঢাকা বোর্ডে গণিতে পাসের হার ৭৫.১৪ শতাংশ, যেখানে বাংলায় ৯৭ শতাংশ, ইংরেজিতে ৮৮ শতাংশ, পদার্থবিজ্ঞানে ৯৩ শতাংশ, রসায়নে ৯৫ শতাংশ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ৯৮ শতাংশ এবং পৌরনীতিতে ৯৪ শতাংশ।
গণিত সবার জন্য বাধ্যতামূলক হওয়ায় এই বিষয়ের খারাপ ফল সার্বিক ফলাফলে বড় প্রভাব ফেলেছে।
উত্তরপত্র মূল্যায়নে ছিল কঠোরতা
শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানদের সংগঠন আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, কোনো নির্দিষ্ট পাসের হার নির্ধারণ করে পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। তবে উত্তরপত্র মূল্যায়নে এবার কোনো শিথিলতা ছিল না। আগের তুলনায় মূল্যায়নে বেশি গুরুত্ব ও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।
তিনি জানান, শিক্ষকদের নিরপেক্ষ ও সঠিকভাবে মূল্যায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল এবং সেই অনুযায়ী ফলাফল নির্ধারিত হয়েছে।
জিপিএ-৫ প্রাপ্তি কমেছে সবচেয়ে বেশি
২০২১ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ বছর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে কম।
-
২০২১ সালে জিপিএ–৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪০ জন
-
২০২২ সালে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯০ জন
-
২০২৩ সালে ১ লাখ ৫৯ হাজার ২২০ জন
-
২০২৪ সালে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪৫ জন
-
আর এবার ২০২৫ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ১৮ জন
মেয়েরা এগিয়ে
মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে আছে পাসের হার এবং জিপিএ–৫ প্রাপ্তিতে।
মেয়েদের পাসের হার প্রায় ৭১ শতাংশ, ছেলেদের পাসের হার ৬৫ শতাংশের বেশি। জিপিএ–৫ পেয়েছে ৬৬ হাজার ৭৮০ জন মেয়ে এবং ৫৮ হাজার ২৩৮ জন ছেলে।
শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে
সারা দেশের ৩০ হাজার ৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে শতভাগ পাস করেছে মাত্র ৯৮৪টি প্রতিষ্ঠান। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯৬৮টি।
অন্যদিকে, এবার ১৩৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থীই পাস করেনি, যা গতবারের তুলনায় ৮৩টি বেশি।
শিক্ষাবিদদের মতামত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, পাস–ফেলকে মুখ্য না করে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিক্রম অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জনের দিকে নজর দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থী যেন প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে পাস করতে পারে, সেটিই হওয়া উচিত প্রধান লক্ষ্য।
No comments