Header Ads

ইরান এবার বড় যুদ্ধের জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নেবে

    

ইরান এবার বড় যুদ্ধের জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নেবে


   


 যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যে অস্বস্তিকর যুদ্ধবিরতি হয়েছে, তাতে ১২ দিনের টানা পাল্টাপাল্টি হামলার অবসান ঘটেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সংঘাতকে ইসরায়েলের বিজয় হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তবে যুদ্ধটি একুশ শতকের একটি স্বল্পস্থায়ী সংঘর্ষ হিসেবেই ইতিহাসে চিহ্নিত থাকবে।

ইরানও নিজেকে এই সংঘাতে বিজয়ী দাবি করেছে। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ইরান-ইরাক যুদ্ধ শেষে যেমন তারা বিজয়ের দাবি করেছিল, এবারের ঘটনাও অনেকটা সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। সেসময় যেমন ইরাকের সাদ্দাম হোসেন নিজেকে বিজয়ী বলেছিলেন, তেমনি এবারও দুই পক্ষই নিজেদের বিজয় দাবি করছে।

দুই ক্ষেত্রেই ইরানকে প্রথমে আক্রান্ত হতে হয়েছে। দেশটির শাসকগোষ্ঠী এই দুই যুদ্ধকে ‘আরোপিত’ বলে বর্ণনা করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘সবুজ সংকেত’কেই এর পেছনে দায়ী করছে।

ইরান এই দুই যুদ্ধে বিজয়ের জন্য এক কৌশল অবলম্বন করেছে—“কৌশলগত ধৈর্য” বা সব্র-ই রাহবর্দি। অর্থাৎ, সংযমের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পরিস্থিতিকে নিজের পক্ষে আনা। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়ও তেহরান সময়কে পুঁজি করেই ধীরে ধীরে পাল্লা ভারি করেছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত ১৯৯১ সালে সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, এবং ২০০৩ সালে তাকে ক্ষমতাচ্যুতও করেছিল।

এবারও তেহরান একই কৌশল অনুসরণ করছে। যুদ্ধবিরতিকে তারা প্রকাশ্যে স্বাগত জানালেও, দেশটির রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব এটিকে কৌশলগত বিরতি হিসেবে দেখছে—টেকসই শান্তি নয়।

কৌশলগত ঘাটতি পূরণে নতুন পরিকল্পনা

এই যুদ্ধবিরতির পর ইরান এখন রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও সু-৩৫ যুদ্ধবিমান সংগ্রহের দিকে ঝুঁকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চীনের যুদ্ধবিমান সংগ্রহের বিষয়টিও বিবেচনায় আনছে তারা, বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে চীনা যুদ্ধবিমানগুলোর সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে।

ইরান সময়কে একটি মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে। পারমাণবিক কৌশল পুনর্মূল্যায়ন, আঞ্চলিক জোট সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।

এই প্রেক্ষাপটে ইরান তাদের সামরিক প্রস্তুতি ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করবে, বিশেষ করে নৌবাহিনী ও সাইবার অপারেশনের সক্ষমতা। লক্ষ্য—একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশোধের রূপরেখা তৈরি করা।

তিনটি বড় লক্ষ্য

তেহরান এখন তিনটি বড় কৌশলগত চিন্তার দিকে মনোযোগ দেবে:

  1. নেতৃত্ব পুনর্গঠন

  2. অস্ত্রভাণ্ডার পূর্ণ ও আধুনিকীকরণ

  3. আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক আক্রমণের কৌশল সাজানো

অতীত থেকে শিক্ষা

১৯৮১ সালে ইরান ভয়াবহ কিছু হামলার শিকার হয়েছিল। জুন মাসে ইসলামিক রিপাবলিকান পার্টির কার্যালয়ে বোমা হামলায় ৭৪ জন নিহত হন, যাঁদের মধ্যে ছিলেন মহাসচিব মোহাম্মদ বেহেশতি। একই বছরে সীমান্তে যুদ্ধে নিহত হন সামরিক নেতা মোস্তাফা চামরান। আগস্টে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ-আলি রাজাই এবং প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ-জাভাদ বাহোনার মৃত্যু হয় বোমা হামলায়। এই হামলা চালিয়েছিল মুজাহিদিন-ই-খালক নামে একটি সশস্ত্র বিরোধী গোষ্ঠী, যারা ইরান-ইরাক যুদ্ধকালে সাদ্দাম হোসেনের মিত্র ছিল।

তবু ইরান পাল্টা আক্রমণে সক্ষম হয়েছিল এবং নিজেদের ভূখণ্ড থেকে ইরাকি সেনাদের সরিয়ে দিয়েছিল।

সাম্প্রতিক হামলা ও প্রতিক্রিয়া

২০২৫ সালের ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান চালায়। শুধু পরমাণু স্থাপনাই নয়, ইরানের সামরিক ও বিজ্ঞানী নেতৃত্বকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান হোসেইন সালামি এবং অ্যারোস্পেস প্রধান আমির আলি হাজিজাদেহ। আরও কয়েকজন পারমাণুবিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন।

এরপরও ইরান বিপুলসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে সক্ষম হয়, যা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে তীব্র চাপে ফেলে দেয়। যদিও এতে তাদের নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার ও অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

No comments

Powered by Blogger.