রংপুর-৪: ভরসার আসনে জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে কী পারবে বিএনপি?
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তফসিল ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন। তবে তার আগেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা নেমে পড়েছেন মাঠে। শুরু হয়ে গেছে কৌশলভিত্তিক আগাম প্রচার। শহর থেকে গ্রাম—সব জায়গায়ই চলছে গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, পথসভা ও নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড।
বিভিন্ন রঙের ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ও ছবি যুক্ত করে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। অনেকে আবার সরাসরি সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। নির্বাচনী উত্তাপ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে তৃণমূলেও।
রংপুর বিভাগের ৬টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা)। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা টিপু মুনশিকে হারিয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী এমদাদুল হক ভরসা। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও বিএনপি এই আসনটিকে ‘নির্ভার’ আসন হিসেবে বিবেচনা করে আসছিল।
তবে হঠাৎ করেই পাল্টে গেছে রাজনীতির সমীকরণ। জামায়াতে ইসলামীর রংপুর মহানগরের আমির অধ্যাপক এটিএম আজম খানকে এই আসনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল এবং আগে থেকেই শক্ত সংগঠন থাকার কারণে তারা আত্মবিশ্বাসী ছিল। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন এবং উপজেলা পর্যায়ে জামায়াত ইতিমধ্যেই নির্বাচনী কমিটি গঠন করেছে।
তবে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন এনসিপির (ন্যাশনাল কনজারভেটিভ পার্টি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন। সম্প্রতি তাকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করার পরেই পাল্টে যেতে শুরু করে মাঠের সমীকরণ। তার পথসভাগুলোতে ব্যাপক জনসমাগম এবং বিশেষ করে তরুণদের আগ্রহে তাকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনার কথা বলছেন অনেকেই। কেউ কেউ বলছেন, বিএনপি-জামায়াতের ভোটব্যাংকে বড়সড় ভাঙন ধরাতে পারেন তিনি।
গত ৫ আগস্টের পর রংপুর-৪ আসনটি বিএনপির জন্য সবচেয়ে নিশ্চিত আসন হিসেবে বিবেচিত ছিল। কিন্তু আখতারের আগমনে সেটি এখন আর নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।
স্থানীয় ভোটার আরিফুল ইসলাম নয়ন বলেন, “প্রার্থীরা এখন ঘরে ঘরে আসছেন, কথা বলছেন, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ভালোই লাগছে। কিন্তু ভোট যেন দেরি না হয়। আগেভাগেই হলে ভালো হতো। আগে যারা এক ছিল, এবার ভাগ হয়ে গেছে। দেখে-শুনে ভোট দিতে হবে।”
বহু ভোটার বলছেন, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা তাদের হতাশ করেছে। অনেকে বলছেন, “আগে মনে হতো এমদাদ ভরসা জিতবে, জামায়াতও শক্ত ছিল। কিন্তু এখন আখতারের আগমনে সব হিসাব গুলিয়ে গেছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কে জয় পায়।”
প্রার্থীদের মতে, নির্বাচন হবে—এই বিশ্বাস থেকেই তারা আগেভাগে মাঠে নামছেন। জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং এলাকার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করাই এখন তাদের লক্ষ্য। প্রচারের পাশাপাশি জনগণের কথা শুনে সমস্যার সমাধানে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী এমদাদুল হক ভরসা বলেন, “আমি আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী টিপু মুনশির সঙ্গে ভোট করেছি। আমাকে সিস্টেমে হারানো হয়েছে। এই এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবাসে, ভোট দেয়। এবারও যদি মনোনয়ন পাই, মানুষ আমাকেই জিতিয়ে আনবে ইনশাআল্লাহ।”
জামায়াতের প্রার্থী এটিএম আজম খান বলেন, “আমাদের সংগঠন ও ভোটব্যাংক শক্ত। আমরা মাঠে আছি। এই আসনের মানুষ অবহেলিত। তারা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। সুষ্ঠু ভোট হলে মানুষ জামায়াতকেই বেছে নেবে।”
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পরে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হতো। দেশের বিচারব্যবস্থা, প্রশাসনসহ সব খাতে গণতন্ত্রের ছোঁয়া দরকার। মানুষের অধিকার বাস্তবায়নে নির্বাচন যেন সত্যিকার অর্থে কার্যকর হয়—এই দাবি নিয়েই আমরা মাঠে নেমেছি।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এখনো তফসিল ঘোষণা না হলেও প্রার্থীদের মাঠে সক্রিয় উপস্থিতি স্পষ্ট করে দিচ্ছে, সব রাজনৈতিক দলই নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। আগাম প্রচার প্রার্থীদের আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন হলেও নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও সময়মতো ঘোষণা না এলে ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে।
সংক্ষেপে মূল বিষয়গুলো:
-
রংপুর-৪ আসনে নির্বাচনী উত্তাপ স্পষ্ট।
-
বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি তিন পক্ষের জমজমাট লড়াই।
-
আখতার হোসেনের আগমনে নতুন হিসাব তৈরি।
-
ভোটাররা বলছেন, এবার সিদ্ধান্ত নিতে হবে দেখে-শুনে।
-
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রার্থীদের তৎপরতা বাড়লেও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এখনো অস্পষ্ট।
চূড়ান্ত লড়াইয়ে কে জিতবে—তা সময়ই বলে দেবে। তবে ভোটের আগেই মাঠে যে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে, তা বলছে রংপুর-৪ এবার হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসন।
No comments