মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ড: মূল ঘটনা জানুন
ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ী চাঁদ মিয়া ওরফে সোহাগকে টেনে-হিঁচড়ে নিজ দোকান থেকে বের করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। শত শত মানুষের সামনে এই হামলা চালানো হয়। এ সময় সোহাগের দুই কর্মচারী মো. ইসমাইল ও মো. বাবুল খুনিদের পায়ে লুটিয়ে পড়ে প্রাণভিক্ষা চেয়েও ব্যর্থ হন। হামলাকারীরা সোহাগকে কুপিয়ে, পিটিয়ে ও মাথা থেঁতলে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে।
মূল অভিযুক্ত ও গ্রেপ্তার
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়েছেন চকবাজার থানা যুবদলের সদস্য সচিব পদপ্রার্থী মাহমুদুল হাসান মহিন ও ছাত্রদলের সদস্য সচিব অপু দাস। ইতোমধ্যে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে মামলার প্রধান আসামি মহিন এবং ছাত্রদল নেতা তারেক রহমান রবিনকে। রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাব গ্রেপ্তার করেছে মনির ও আলমগীর নামে আরও দুই আসামিকে। মোট গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে মহিন ও রবিনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
ভিডিও ফুটেজে হত্যার বিবরণ
সিসিটিভি ভিডিওতে দেখা যায়, মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের কাছে বৃষ্টির পানিতে ভেজা রাস্তায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় পড়ে ছিলেন সোহাগ। তখন রিয়াদ, সজীব, নান্নু, লম্বা মনির ও ছোট মনির মিলে তাকে ইট ও কংক্রিট দিয়ে নির্মমভাবে পেটাতে থাকেন। একের পর এক মাথায় আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
অভিযোগ ও পটভূমি
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী, মহিন-অপু সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি ও ব্যবসা দখলের মাধ্যমে এলাকায় দৌরাত্ম্য চালিয়ে আসছিল। সোহাগ এক সময় তাদের ঘনিষ্ঠ থাকলেও, বিদ্যুতের তার ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সিন্ডিকেট চেয়েছিল ওই ব্যবসার ৫০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ। এতে রাজি না হওয়ায় সোহাগ হামলার শিকার হন।
সোহাগের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলায় ২০ জনের বেশি ব্যক্তিকে আসামি করেছেন। এজাহারে উল্লেখিতরা হলেন: মাহমুদুল হাসান মহিন, অপু দাস, রিয়াদ, সজীব, নান্নু, ছোট মনির, লম্বা মনির, রজব আলী পিন্টু, রবিন, টিটু, টিটন গাজী, রাকিব, কালু, আলমগীর, সাবাহ করিম লাকি, মো. সিরাজুল ইসলাম, হিম্মত আলী, আনিসুর রহমান হাওলাদার এবং আরও অজ্ঞাতপরিচয় ১৫-২০ জন।
সংগঠন থেকে বহিষ্কার
যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই ঘটনায় জড়িত চারজন নেতাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে। তারা হলেন—রজব আলী পিন্টু, সাবাহ করিম লাকি, অপু দাস ও কালু। যুবদল জানায়, এ ধরনের অপরাধের দায়দায়িত্ব সংগঠন নেবে না।
পুলিশ ও র্যাবের অভিযান
ডিএমপির মিডিয়া শাখার উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং পূর্বশত্রুতার জের ধরেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এজাহারভুক্ত ও পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানের শিক্ষার্থীরা। স্লোগানে স্লোগানে তারা দোষীদের দ্রুত বিচার দাবি করেন।
ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে তারা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, বিএনপি নিজেদের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ।
রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং গণসংহতি আন্দোলন এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, এটি পরিকল্পিত ও ভয়াবহ। হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানায় তারা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ ঘটনায় জাতির বিবেক স্তম্ভিত। তিনি নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। একইসঙ্গে নিহত সোহাগের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি জানান, ভিডিও ফুটেজে যাদের দেখা গেছে, তাদের সংগঠন থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।
এবি পার্টির নেতারাও সোহাগ হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
No comments