Header Ads

অস্থির বাজারে ভোগান্তিতে ক্রেতারা

              

অস্থির বাজারে ভোগান্তিতে ক্রেতারা



চাল, সবজি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার গত দুই সপ্তাহ ধরে অস্থির হয়ে আছে। গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ তুলনামূলক বেশি থাকলেও বেশিরভাগ সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। একই অবস্থা চালের বাজারেও। ঈদের পর মিনিকেট, ব্রি-২৮ ও পাইজাম চালের দাম বেড়ে গেছে। তবে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে মুরগি, ডিম ও কিছু মুদি পণ্যে।

শুক্রবার (৪ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, বাড্ডা, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, মালিবাগ, শান্তিনগর, জোয়ারসাহারা ও সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ সবজি এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকা বা তার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। করলা, বরবটি, বেগুন, ঢ্যাঁড়শ, ঝিঙা, চিচিঙ্গা ও ধুন্দলের মতো সাধারণ সবজি এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও এই সবজিগুলোর দাম ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

বিক্রেতারা জানান, গ্রীষ্মকালীন সবজির মৌসুম শেষের দিকে চলে আসায় পাইকারি বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। ফলে আড়ত থেকে বাড়তি দামে কিনে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।

বর্তমানে বাজারে সবজির দাম (প্রতি কেজি):

  • বেগুন: ৭০–১০০ টাকা

  • বরবটি: ৮০–১০০ টাকা

  • করলা: ৮০–৯০ টাকা

  • পটোল/পেঁপে: ৫০–৬০ টাকা

  • ঢ্যাঁড়শ: ৬০–৭০ টাকা

  • চিচিঙ্গা/ঝিঙা: ৭০–৮০ টাকা

  • শিম: ৩০০–৪০০ টাকা

  • ধনেপাতা: ৩৫০–৪০০ টাকা

  • ফুলকপি/বাঁধাকপি: ৮০–১০০ টাকা

তবে মিষ্টিকুমড়া, লাউ ও চালকুমড়ার মতো কিছু সবজি এখনো তুলনামূলকভাবে কম দামে (৪০–৫০ টাকা) পাওয়া যাচ্ছে।

চাল বাজারেও তীব্র প্রভাব পড়েছে। ঈদের পর মিনিকেট চাল কেজিতে ৮২–৯২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে ঈদের আগে ছিল ৭২–৮২ টাকা। ব্রি-২৮ ও পাইজাম চাল কেজিতে ৬০–৬৫ টাকা, নাজিরশাইল ৮৪–৯০ টাকা, স্বর্ণা (মোটা চাল) ৫৫–৫৮ টাকা এবং কাটারিভোগ ৭০–৭৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মালিবাগের চাল ব্যবসায়ী সুমন আহমেদ জানান, ঈদের পর মোকামে চালের দাম বস্তাপ্রতি ২০০–৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে খুচরা পর্যায়ে। এতে সাধারণ মানুষ খাদ্য বাজেট মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

তবে আমিষজাতীয় কিছু পণ্যে কিছুটা স্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

  • ব্রয়লার মুরগি: ১৫০–১৬০ টাকা

  • সোনালি মুরগি: ২৮০–৩২০ টাকা

  • লাল লেয়ার: ২৯০ টাকা

  • দেশি মুরগি: ৬৫০ টাকা

  • ফার্মের ডিম (ডজন): ১২০ টাকা

  • দেশি ডিম (হালি): ৯০ টাকা

মাছের বাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা:

  • ইলিশ (১ কেজি): ২,৭০০ টাকা

  • ইলিশ (৭০০ গ্রাম): ২,৪০০ টাকা

  • দেশি শিং: ১,০০০ টাকা

  • দেশি মাগুর: ৮০০–১,০০০ টাকা

  • চাষের রুই/মৃগেল: ৩৫০–৪৫০ টাকা

  • চিংড়ি: ৮০০–১,২০০ টাকা

  • কাতলা: ৪০০–৫৫০ টাকা

  • বোয়াল: ৬০০–৮০০ টাকা

গরুর মাংস ৭৮০–৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১,২০০ টাকা, কলিজা ও মাথার মাংস যথাক্রমে ৮০০ ও ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০–৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

মসলা ও ডালের বাজারেও কিছুটা পরিবর্তন:

  • আদা (দেশি): ১৪০–১৮০ টাকা

  • রসুন: ১২০–২০০ টাকা

  • মসুর ডাল: ১৪০ টাকা

  • মুগ ডাল: ১৬০–১৮০ টাকা

  • খেসারির ডাল: ১৩০ টাকা

  • ছোলা: ১১০ টাকা

  • জিরা: ৬০০–৭০০ টাকা (মূল্য কিছুটা কমেছে)

পেঁয়াজ ও আলুর দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল:

  • দেশি পেঁয়াজ: ৫৫–৬০ টাকা

  • ভারতীয় পেঁয়াজ: ৪৫–৫০ টাকা

  • আলু: ২৫–৩০ টাকা

তেল, আটা, ময়দা, সুজি ইত্যাদি মুদি পণ্যের দামেও তেমন পরিবর্তন নেই। চিনির দাম কিছুটা কমেছে—খোলা চিনি ১০৫ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতাদের অভিযোগ, চাল ও সবজির দাম বাড়ায় তাদের দৈনন্দিন ব্যয় বেড়ে গেছে। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, “আগে যেটুকু বাজারের টাকা দুই দিন চলত, এখন এক দিনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। মাস শেষে বাজেট মিলানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে।”

অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীদের মতে, ঈদের পর সরবরাহে কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারেও স্বাভাবিক দাম রাখা সম্ভব হচ্ছে না, যার ফলে সামগ্রিকভাবে বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।

No comments

Powered by Blogger.