Header Ads

যুক্তরাষ্ট্রে বন্যা এত ভয়াবহ কেন হলো—দায়ী কে?

 

যুক্তরাষ্ট্রে বন্যা এত ভয়াবহ কেন হলো—দায়ী কে?


                

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ১১১ জনে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ১৭০ জনের বেশি। সবচেয়ে বিপর্যস্ত এলাকা কার কাউন্টি, যেখানে এক জেলাতেই নিখোঁজ ১৬১ জন। রাজ্যের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট জানিয়েছেন, নিখোঁজদের সন্ধানে একাধিক সংস্থা যৌথভাবে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

সবচেয়ে হৃদয়বিদারক দিক হলো—নিহত ও নিখোঁজদের অনেকেই অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যাশিশু, যারা ছুটির দিনে ‘ক্যাম্প মিস্টিক’ নামে একটি গার্লস ইয়ুথ ক্যাম্পে অংশ নিতে এসেছিল। মেয়েদের জন্য পরিচালিত এই বিশেষ ক্যাম্পটিতে বন্যার সময় বহু শিশু-কিশোরী অবস্থান করছিল।

বন্যার মাত্র দুই দিন আগে রাজ্য পর্যবেক্ষকরা ক্যাম্পটি পরিদর্শন করে এর অবকাঠামো ও নিরাপত্তা পরিকল্পনাকে ‘উপযুক্ত’ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। অথচ সেই ঘোষণার কিছুদিনের মধ্যেই হঠাৎ ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসে এলাকা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে প্রশ্ন উঠছে—আগাম পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও কেন সময়মতো সতর্কতা জারি করা হয়নি? কেন জনগণকে প্রস্তুতির সময় দেওয়া হয়নি?

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গভর্নর অ্যাবট এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, রাজ্যের জরুরি সতর্কতা ব্যবস্থা যথাযথভাবে কাজ করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে আগামী মাসে আইনসভায় একটি বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯২১ সালের পর এটিই টেক্সাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী মিষ্টি পানির বন্যা। সে বছর সান অ্যান্টোনিও অঞ্চলে ৩৬ ঘণ্টায় প্রায় ৪০ ইঞ্চি বৃষ্টিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত ২১৫ জন।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাম নিশ্চিত করেছেন, নিহতদের মধ্যে একজন মেক্সিকান নাগরিকও রয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, আগাম সতর্কতা থাকলেও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি এবং গণমাধ্যমের প্রশ্নের মুখেও বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। অনেক ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিক দাবি করেছেন, তারা কোনো সতর্কবার্তা পাননি কিংবা বার্তা এসেছে অনেক দেরিতে।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বন্যাকবলিত অঞ্চলকে ‘মেজর ডিজাস্টার এরিয়া’ হিসেবে ঘোষণা দিলেও, আবহাওয়া বিভাগসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফেডারেল সংস্থার বাজেট কমানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন। বিষয়টি নিয়ে সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এমন বাজেট কাটছাঁট ভবিষ্যতের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করে।

এছাড়া, হাউজিং অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট বিভাগ কার কাউন্টির এফএইচএ-সমর্থিত বাড়িগুলোর জন্য ৯০ দিনের ফোরক্লোজার স্থগিতাদেশ ঘোষণা করেছে এবং জানিয়েছে, তারা বন্যা-সম্পর্কিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে কাজ করছে।

এই ভয়াবহ দুর্যোগের পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—যদি সময়মতো সতর্কবার্তা, কার্যকর প্রস্তুতি ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা থাকত, তবে কি এত প্রাণহানি এড়ানো যেত? কার ব্যর্থতায় এত বড় বিপর্যয় ঘটল? ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও সাধারণ জনগণ এসব প্রশ্নের জবাব জানতে চায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দায় এড়ানোর আর কোনো সুযোগ নেই।

No comments

Powered by Blogger.