Header Ads

কেন ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাচ্ছে এনসিপি?

     

কেন ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাচ্ছে এনসিপি?



  

গত বছরের ৩ আগস্ট রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে সরকার পতন ও ফ্যাসিবাদ বিলোপের এক দফা দাবি ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই ঘটনার বর্ষপূর্তি হতে যাচ্ছে আগামী মাসে। এই ঐতিহাসিক দিনটি স্মরণে আবারও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বড় ধরনের সমাবেশের পরিকল্পনা করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

এ উপলক্ষে এনসিপি বর্তমানে সারা দেশে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শিরোনামে কর্মসূচি চালাচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী এনসিপির নেতারা জেলা থেকে জেলায় ঘুরে পথসভা ও সমাবেশ করছেন, যেখানে সাধারণ মানুষের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে। এই পদযাত্রা চলবে ৩০ জুলাই পর্যন্ত। এরপর ৩ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হবে প্রধান সমাবেশ।

এ সমাবেশে আসলে কী ঘটবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌতূহল রয়েছে। কারণ, গত ২৯ জুন ঢাকার বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন যে, ৩ আগস্ট ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে তাঁরা ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ এবং ইশতেহার পাঠ করবেন।

পরবর্তীতে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকার দুই দফায় (জানুয়ারি ও জুনে) প্রতিশ্রুতি দিয়েও জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে পারেনি এবং ব্যর্থতার কারণও স্পষ্ট করেনি। তাই এনসিপি এখন সরকারের ওপর ভরসা না করে নিজেরাই জনগণের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে। এ কাজ ৫ আগস্টের মধ্যেই শেষ করা হবে।

সম্প্রতি মাগুরায় এক পদযাত্রা সমাবেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই ৩ আগস্টের মধ্যেই সরকার জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ প্রকাশ করুক। অন্যথায়, আমরা ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে নতুন করে আন্দোলনে নামব।’

অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে কিছু অগ্রগতি দেখা গেলেও তা এনসিপিকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনীতিবিদ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে ঘোষণাপত্র প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি খসড়া বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছে। সরকার চায়, ৫ আগস্টের আগেই এই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করা হোক।

তবে এনসিপি চায়, ঘোষণাপত্রটি সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে স্বীকৃতি পায় এবং কার্যকর হয়। বিএনপি অবশ্য পুরো ঘোষণাপত্র নয়, বরং “জুলাই অভ্যুত্থান ২০২৪” শিরোনামে এর চেতনার প্রতিফলন মাত্র চতুর্থ তফসিলে যুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছে।

এ বিষয়ে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধান—এই তিন দাবিকে সামনে রেখে আমরা পদযাত্রা করছি। এরপর ৩ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বড় সমাবেশ হবে। যদি এর আগে সরকার ঘোষণাপত্র দেয়, তাহলে সমাবেশটি হবে অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন। না হলে, সেদিনই জনগণের পক্ষ থেকে আমরা নিজস্ব ঘোষণাপত্র প্রকাশ করব।’

এনসিপি বলছে, বর্তমান সরকার জনগণের ভোট ছাড়া ক্ষমতায় ছিল এবং সাংবিধানিক আবরণে দুঃশাসন চালিয়েছে। এর বিরুদ্ধে ছিল গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। ভবিষ্যতে এই অভ্যুত্থানকে ‘অসাংবিধানিক ক্ষমতা দখল’ হিসেবে দেখিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হতে পারে—এই আশঙ্কা থেকে আন্দোলনকারীরা একটি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি চায়। এনসিপির দাবি, ঘোষণাপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে, অভ্যুত্থানটি জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ছিল এবং এটি বৈধ ছিল।

এ প্রসঙ্গে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই সরকার ও সব ফ্যাসিবাদবিরোধী পক্ষ একমত হয়ে জুলাই মাসের মধ্যেই ঘোষণাপত্র জারি করুক। কিন্তু যদি তা না হয়, তবে আমরা নিজ উদ্যোগে ৩ আগস্ট ঘোষণাপত্র প্রকাশ করব।’

এখন দেখার বিষয়, সরকার ৩ আগস্টের আগে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে কিনা—এই দিকেই নজর রাখছে এনসিপি।

No comments

Powered by Blogger.