Header Ads

প্রাথমিক শিক্ষকেরা আবারও আন্দোলনের পথে

             
     

প্রাথমিক শিক্ষকেরা আবারও আন্দোলনের পথে



সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা আবারও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে উন্নীতকরণ এবং সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ১৮ জুলাই বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষক মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি) ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে আমরণ অনশনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

কয়েক দফা আন্দোলনের পরও সন্তোষজনক সমাধান না আসায় ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। আদালতের নির্দেশে ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হলেও, বাকিদের জন্য এবং সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি চারটি মূল দাবিতে আন্দোলন করছে: সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়ন; ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে সব প্রধান শিক্ষকের ১০ম গ্রেডের জিও জারি; সিনিয়র শিক্ষকদের চলতি দায়িত্বসহ ১০০% পদোন্নতি; এবং ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রদান।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাসেম বলেন, আদালতের নির্দেশে ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকই দশম গ্রেড পাবেন, কিন্তু বাকি ৬৫ হাজার ৫২৪ জন প্রধান শিক্ষকের জন্যও একই সুযোগ দিতে হবে। ১৮ জুলাইয়ের মহাসমাবেশের আগে দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি) গত শনিবার পাঁচটি দাবি উত্থাপন করে এবং সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তাদের দাবিগুলো হলো: সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়ন এবং ৬৫ হাজার ৫২৪ জন প্রধান শিক্ষকের দশম গ্রেডের জিও জারি; সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে প্রধান শিক্ষক পদে ১০০% পদোন্নতি; চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের যোগদানের তারিখ থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি; ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে শর্তহীন উচ্চতর গ্রেড প্রদান; এবং নবম পে-স্কেল ঘোষণা।

এই দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য তারা কর্মসূচি নিয়েছে: ১৩ জুলাই জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া, ১৪ জুলাই মহাপরিচালক ও সচিবের কাছে পদোন্নতি সংক্রান্ত মামলা সমাধান, ১৪ আগস্ট বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান, ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ, এবং ২৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশন।

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি এবং সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদও মহাসমাবেশসহ বিভাগীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তাদের তিন দফা দাবি হলো: কনসালটেশন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ; ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা দূর করা; এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ দ্রুত পদোন্নতি।

এই সংগঠনগুলোর আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ জানান, ৩০ আগস্ট ঢাকায় সমাবেশ হবে। এর আগে ১২ জুলাই চট্টগ্রাম, ১৯ জুলাই সিলেট, ২৬ জুলাই খুলনা, ২ আগস্ট রাজশাহী ও রংপুর, এবং ৯ আগস্ট বরিশাল বিভাগে বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান জানিয়েছেন, শিক্ষকদের মূল দাবির সমাধান প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে ১২তম ও ১১তম গ্রেডের খরচ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে এবং মন্ত্রণালয় শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেবে।

শিক্ষকদের এই ধারাবাহিক আন্দোলনে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরকার ও শিক্ষক সংগঠনগুলোর মধ্যে দ্রুত সমাধানের পথ খুঁজে বের করা জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.