জামায়াত প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে যে মতামত দিল
একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন—জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এমন প্রস্তাবে একমত পোষণ করেছে জামায়াতে ইসলামি। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম এই বক্তব্য দেন।
বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ ১০ বছর মেয়াদ নিয়ে আমরা একমত।
বৈঠকের অন্যান্য বিষয় তুলে ধরে রফিকুল ইসলাম জানান, “রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংযোজিত ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমরা একমত, যদিও বামপন্থিদের আপত্তি রয়েছে। এছাড়া, নতুন প্রস্তাবে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) পরিবর্তে ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ নিয়োগ কমিটি’ (সাসনিক) রাখা হয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির নিয়োগ বাদ দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “সাসনিক গঠনের বিষয়ে বেশিরভাগ দল একমত, শুধুমাত্র বিএনপি দ্বিমত জানিয়েছে। স্বৈরাচারী শাসন থেকে দেশকে রক্ষার জন্য এই প্রস্তাব আমরা সমর্থন করি। আশা করি ঐকমত্য কমিশন এই বিষয়ে দৃঢ় থাকবে।”
অন্যদিকে, বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ লাইফ টাইমে ১০ বছরের বেশি থাকবে না—এই বিষয়ে আমরা একমত। তবে সাসনিকের মাধ্যমে যদি নির্বাহী বিভাগের ওপর অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ হয়, তবে আমরা একমত নই।”
তিনি আরও বলেন, “এক ব্যক্তি স্বৈরাচার হয়েছে বলে নির্বাহী বিভাগকে সম্পূর্ণ ক্ষমতাহীন করে দেওয়ার পক্ষে আমরা নই।
সংবিধানের মূলনীতির প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে গৃহীত সংবিধানের মূলনীতিগুলোর সঙ্গে আমরা একমত। আমরা চাই সেই ধারাগুলোর সঙ্গে অন্যান্য বিষয় যুক্ত হোক। আগে যে বিষয়টি এনসিসি ছিল, এখন সেটি সাসনিক হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এবং গণতন্ত্রের আওতায় আনতে আইন প্রণয়ন ও সংস্কার হোক। তবে এজন্য আলাদা করে সাসনিক গঠনের প্রয়োজন নেই বলে আমরা মনে করি।”
এছাড়া, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, গণতন্ত্র ও সামাজিক সুবিচার সংবিধানের মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে বিএনপির ইতিবাচক অবস্থানও তুলে ধরেন তিনি।
বৈঠকে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সংস্কারের অংশ হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি এবং নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আলোচনা হয়।
উল্লেখ্য, জাতীয় সনদ তৈরির লক্ষ্যে ২ জুন দ্বিতীয় দফার আলোচনার মাধ্যমে কাজ শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
বৈঠক শেষে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “সংবিধানের বর্তমান চারটি মূলনীতি বহাল রাখার বিষয়ে কয়েকটি দল একমত, আবার কয়েকটি দল দ্বিমত জানিয়েছে। তবে সংবিধানে নতুন পাঁচটি বিষয়ের সংযোজন নিয়ে সব দল একমত।”
তিনি জানান, বিভিন্ন দলের প্রস্তাবের ভিত্তিতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) নাম পরিবর্তন করে ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ নিয়োগ কমিটি’ (সাসনিক) রাখা হয়েছে।
No comments