Header Ads

সোনা আমদানিতে কড়াকড়ি, দামে বড় ঊর্ধ্বগতির আশঙ্কা

         

সোনা আমদানিতে কড়াকড়ি, দামে বড় ঊর্ধ্বগতির আশঙ্কা

 
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও ডলারের দামের কারণে সোনার দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশেও। এখন এক ভরি (২২ ক্যারেট) সোনার দাম দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩৩৬ টাকা, যেখানে ২০২৪ সালের শেষ দিকে ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার ৫৮৬ টাকা। অর্থাৎ মাত্র ছয় মাসেই ভরিপ্রতি বেড়েছে ৩১ হাজার ৭৫০ টাকা।

এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিয়েশাদির মতো অনুষ্ঠানে সোনার গয়না কেনা হয়ে উঠছে অনেকের জন্য অসম্ভব। এতে করে জুয়েলারি ব্যবসাও পড়েছে চাপে।

বিদেশের তুলনায় বাংলাদেশে সোনার দাম বেশি কেন?

দুবাইয়ের চিত্র:
দুবাইয়ে সোমবার (গতকাল) ২২ ক্যারেট সোনার ভরি ছিল ৪,৩১৮ দিরহাম, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৭৭ টাকা।

ভারতের চিত্র:
ভারতে একই ক্যারেটের সোনা বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৯৬৫ রুপিতে, অর্থাৎ ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৩২ টাকা।

এই হিসাবে বাংলাদেশের তুলনায় দুবাইয়ে সোনার দাম ২৮,৬৫৯ টাকা কম এবং ভারতে ১৬,৯০৪ টাকা কম।

কেন এই পার্থক্য?

বাংলাদেশে এখনো সোনা কেনাবেচায় ‘কমোডিটি এক্সচেঞ্জ’ চালু হয়নি। তাছাড়া বাণিজ্যিকভাবে সোনা আমদানি প্রায় বন্ধ। মূলত ব্যাগেজ বিধিমালা অনুযায়ী প্রবাসীরা শুল্ক দিয়ে সোনা আনেন, আর পুরোনো অলংকার গলিয়ে কিছু চাহিদা মেটানো হয়। তবে অবৈধ পথে সোনা আসার অভিযোগও রয়েছে।

২০১৮ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্বর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করলেও, বাস্তবে এর সুফল তেমনভাবে আসেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে সোনা আমদানির অনুমতি দিলেও নানা জটিলতায় তাদের বেশিরভাগই আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। এর পেছনে ডলার সংকট, আমদানির অনুমতি পেতে বিলম্ব, এবং ভ্যাট সংক্রান্ত সমস্যা বড় কারণ।

ব্যাগেজ বিধিমালায় কড়াকড়ি

২০২৩-২৪ অর্থবছরে সোনা আনার সুযোগ অর্ধেকে কমিয়ে আনা হয়। আগে ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত আনতে পারলেও, তা কমিয়ে ১১৭ গ্রাম করা হয়। সেইসঙ্গে শুল্কও বাড়ানো হয়।

নতুন বাজেটে আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এখন থেকে:

  • যাত্রীরা বছরে একবারই একটি সোনার বার আনতে পারবেন।

  • প্রতি ভরিতে শুল্ক ৫ হাজার টাকা, মানে একবারে আনলে ৫০ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হবে।

  • গয়নার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি: আগে যতবার খুশি ১০০ গ্রাম গয়না আনতে পারতেন, এখন বছরে একবারই ১০০ গ্রাম আনতে পারবেন বিনা শুল্কে।

এই সিদ্ধান্তের প্রভাব কী হবে?

জুয়েলার্স সমিতির একজন নেতা বলেন, যেহেতু দেশে বৈধ পথে সোনা আমদানি হয় না এবং পরিশোধনের কোনো কারখানা নেই, তাই ব্যাগেজ বিধিমালায় এই কঠোরতা সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। এতে অবৈধ পথে সোনা চোরাচালান বাড়তে পারে, ফলে বাজারে অস্থিরতা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সমিতির দাবি কী ছিল?

জুয়েলার্স সমিতি বাজেট প্রস্তাবনায় কিছু দাবি জানিয়েছিল:

  • সোনার গয়নার বিক্রিতে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা,

  • সোনা কেনার সময় ডিলার পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি,

  • আমদানির ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা,

  • দেশে সোনা পরিশোধনের কারখানা গড়তে ১০ বছরের কর অব্যাহতি।

তবে বাজেটে এসব দাবি বাস্তবায়ন না হয়ে শুধু ব্যাগেজ বিধিমালার কড়াকড়ি কার্যকর করা হয়েছে।

ভবিষ্যৎ কি আরও অস্থির?

জুয়েলার্স সমিতির নির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, “যদি সোনা আমদানিকে সহজ করা না হয় এবং দেশে পরিশোধনের ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে সোনার সরবরাহ সংকট বাড়বে। এর ফলে চোরাচালান বাড়তে পারে এবং বাজারে দাম আরও অস্থির হয়ে উঠবে।

No comments

Powered by Blogger.