Header Ads

চামড়ার দেশ বাংলাদেশ, তবু বছরে দেড় হাজার কোটি টাকার আমদানি

      

চামড়ার দেশ বাংলাদেশ, তবু বছরে দেড় হাজার কোটি টাকার আমদানি

       

চামড়া প্রক্রিয়াকরণে আন্তর্জাতিক মানের স্বীকৃতি না থাকায় বাংলাদেশকে বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার চামড়া আমদানি করতে হচ্ছে। অথচ দেশে প্রতিবছর এক কোটির বেশি পশু জবাই হয়, যা বিপুল পরিমাণ চামড়ার উৎস।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে চামড়া বা চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করতে হলে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (LWG) সনদ প্রয়োজন। কিন্তু সাভারের সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (CETP) আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে না পারায় অধিকাংশ ট্যানারি এই সনদ পাচ্ছে না।

বর্তমানে বাংলাদেশের মাত্র ৮টি প্রতিষ্ঠানের এলডব্লিউজি সনদ রয়েছে, যেখানে ভারতের আছে ৩৩৭টি, চীনের ২৬৯টি, পাকিস্তানের ৬২টি। ফলে দেশের রপ্তানিমুখী কোম্পানিগুলোকে চীন, ব্রাজিল, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া থেকে চামড়া আমদানি করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে,

  • ২০২৩–২৪ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকার

  • এর আগের অর্থবছরে ছিল ১ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা

  • চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি হয়েছে ৯৭৬ কোটি টাকার পণ্য

এই আমদানির মধ্যে ছিল—চামড়া, ব্যাগ, পশুর নাড়িভুঁড়ি দিয়ে তৈরি সামগ্রী ও ঘোড়ার সাজসজ্জা সামগ্রী।

সমস্যার মূল কারণ: এলডব্লিউজি সনদের অভাব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. আবু ইউসুফ জানান, এলডব্লিউজি সনদ পেতে সিইটিপিতে অন্তত ৩০০ নম্বর প্রয়োজন, কিন্তু বর্তমান সাভার সিইটিপি সেই মানে পৌঁছাতে পারেনি। ফলে স্থানীয় ট্যানারিগুলোর চামড়ার মান ভালো হলেও তারা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে পারছে না।

তিনি আরও বলেন,

“২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হতো ১২০ কোটি ডলারের মতো। এক দশকে এই রপ্তানি বাড়েনি, যেখানে ভিয়েতনাম একই সময়ে রপ্তানি বাড়িয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলারে।”

বিপুল সম্ভাবনার বাজার, কিন্তু সীমাবদ্ধতা প্রচুর

বিডার তথ্য মতে, দেশের অভ্যন্তরীণ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজারের পরিমাণ প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এ খাতে রয়েছে:

  • ৩,৫০০টির বেশি ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান

  • ২৫০টির বেশি ট্যানারি

  • ৯০টির মতো বড় কোম্পানি

  • ৮–১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান

প্রতি বছর কোরবানির ঈদে জবাই হয় ৯০ লাখ থেকে ১ কোটির বেশি পশু। অর্থাৎ প্রচুর কাঁচা চামড়া পাওয়া গেলেও বিশ্ববাজারে রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে না।

সনদ থাকলে মূল্যও বাড়ে

চট্টগ্রামের রীফ লেদার লিমিটেড ২০১৫ সালে নিজস্ব ইটিপি স্থাপন করে ২০১৯ সালে এলডব্লিউজি সনদ পায়। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক জানান,

“সনদ থাকার কারণে প্রতি বর্গফুট চামড়া দেড় ডলারে বিক্রি করা যায়। অন্যদিকে সাভারের ট্যানারিগুলো অর্ধেক দামে চীনকে বিক্রি করতে বাধ্য হয়।”

কী করণীয়?

র‌্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক মো. আবু ইউসুফ বলেন,

“রপ্তানি বাড়াতে হলে আন্তর্জাতিক কমপ্লায়েন্স মান অর্জন করতে হবে। বিসিকের জায়গায় চামড়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন দরকার, যেন এই খাতের সমস্যা সমাধানে জোরাল নেতৃত্ব দেওয়া যায়।”

সরকার কী করছে?

বিসিক চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম জানান:

  • বিদ্যমান সিইটিপির ক্ষমতা ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার কিউবিক মিটারে উন্নয়ন করতে বাজেট চাওয়া হয়েছে।

  • আরও সাত–আটটি প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব ইটিপি স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা ১০ হাজার কিউবিক মিটার বর্জ্য পরিশোধনে সক্ষম হবে।

  • ইউরোপীয় সহায়তায় ইতালি একটি সমীক্ষা চালাচ্ছে, যার ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

একই সঙ্গে বর্তমান সিইটিপি প্রকল্পের দুর্বলতা বা গাফিলতি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে।

No comments

Powered by Blogger.