ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ধরে সাংগঠনিক প্রস্তুতিতে ব্যস্ত বিএনপি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে—এমনটি ধরে নিয়েই সংগঠন গোছানোর কাজ শুরু করেছে বিএনপি। দলীয় নেতারা এখন নির্বাচনি কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সংগঠনকে তৃণমূল থেকে ঢেলে সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই যেসব জেলা, উপজেলা, পৌর, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, সেসব জায়গায় নতুন কমিটি গঠনের মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বাদে দেশের ৯টি সাংগঠনিক বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র নেতারা ইতোমধ্যে মাঠে নেমে কাজ শুরু করেছেন।
দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইউনিয়ন থেকে শুরু করে জেলা পর্যন্ত সব কমিটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠন করার নির্দেশনা রয়েছে। তবে এ প্রক্রিয়ায় কোথাও কোথাও অভ্যন্তরীণ বিরোধ, সংঘর্ষ, এমনকি বিতর্কের জেরে কোনো কোনো কমিটি বাতিলও করা হয়েছে।
ত্যাগী ও সক্রিয়দের অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ
দলীয় সূত্র বলছে, বিগত আন্দোলন ও দমনপীড়নের সময় যারা সক্রিয় ছিলেন, ক্লিন ইমেজধারী এবং দলপ্রেমী নেতাকর্মীদের অগ্রাধিকার দিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকমান্ড। তবে বাস্তবে কিছু ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা মানা হয়নি। কোথাও কাউন্সিল ছাড়াই কমিটি হয়েছে, আবার এমন নেতারাও গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন, যারা দীর্ঘ সময় ধরে দলীয় কর্মকাণ্ডে অনুপস্থিত ছিলেন।
ফলে মাঠের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ করছেন।
দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাজের অগ্রগতি
উত্তরাঞ্চলের এক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরের আগেই সব কমিটি গঠনের কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। তিনি বলেন, "বিএনপির মতো বড় দলে অনেক নেতা থাকেন, কিন্তু সবাই তো আহ্বায়ক বা সদস্য সচিব হতে পারবেন না। কেউ বাদ পড়লেই তার অনুসারীরা প্রতিবাদ করছেন। যদিও পরে সেসব সমাধানও হচ্ছে।"
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, “তৃণমূলে গিয়ে বৈঠক করে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।”
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশে সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে গেছে বিএনপি। এরপর দলটি পূর্ণাঙ্গভাবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ফেরে এবং ঢাকার বাইরে ৯টি বিভাগে তৃণমূল থেকে জেলা পর্যন্ত সব কমিটি গঠনের জন্য ৯ সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দেয়।
দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা হলেন:
-
রাজশাহী বিভাগ: আব্দুস সালাম
-
সিলেট বিভাগ: অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন
-
ময়মনসিংহ বিভাগ: হাবিব-উন-নবী খান সোহেল
-
খুলনা বিভাগ: আমানউল্লাহ আমান
-
বরিশাল বিভাগ: আব্দুল আউয়াল মিন্টু
-
রংপুর বিভাগ: শামসুজ্জামান দুদু
-
কুমিল্লা বিভাগ: বরকতউল্লা বুলু
-
ফরিদপুর বিভাগ: ড. আসাদুজ্জামান রিপন
-
চট্টগ্রাম বিভাগ: অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান
তারা বিভাগীয় সংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা ও মহানগরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু করেন। যদিও এই দায়িত্ব পাওয়ার পর ৭ মাস পেরিয়ে গেছে।
ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “এই ১৫ বছর সংগঠনকে সক্রিয় রাখা ছিল চ্যালেঞ্জিং। এখন গণতান্ত্রিকভাবে নেতাকর্মীদের ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন হচ্ছে। এতে দল আরও শক্তিশালী হবে।”
চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, বান্দরবান ও নোয়াখালীর নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে এবং তাদের অধীনস্থ কমিটিগুলোও নতুন করে গঠিত হচ্ছে। তার দাবি, বিভাগে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বাকি কাজ সম্পন্ন হবে।
ইতোমধ্যে গঠিত নতুন কমিটি
সূত্রমতে, বিএনপির ৮২টি সাংগঠনিক জেলার অধিকাংশেই আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। অনেক জায়গায় মেয়াদোত্তীর্ণ বা অনুপস্থিত কমিটিও আছে। তবে নভেম্বরের পর নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে: মেহেরপুর, কুড়িগ্রাম, মাগুরা, নাটোর, বান্দরবান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নোয়াখালী, সাতক্ষীরা, কুমিল্লা দক্ষিণ, কুমিল্লা মহানগর, নরসিংদী, খুলনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইত্যাদি জেলায়। এর মধ্যে নরসিংদীতে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন হয়েছে।
সংঘাত ও বিতর্ক
তবে জেলার কমিটি নিয়ে তেমন আপত্তি না থাকলেও ইউনিয়ন, পৌর, থানা পর্যায়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় কমিটি গঠনের সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, এমনকি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে।
পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় নতুন কমিটি গঠনের পর ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিদের পদ দেওয়ার অভিযোগে মাত্র ৯ দিনের মাথায় সেই কমিটি বাতিল করা হয়। এ বিষয়ে তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনেও হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া গেছে।
No comments