বিএনপি হয়তো ধরে নিয়েছে তারা ক্ষমতায় আসবে

   
   

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণ ও জাতীয় ঐকমত্য কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রশ্নে বিএনপি যে অবস্থান নিয়েছে, তা দলের স্বার্থকে দেশের স্বার্থের চেয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে—এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

বুধবার (২৫ জুন) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।

সারজিস আলম লিখেছেন, “বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ মেয়াদ ১০ বছর করার প্রস্তাবে তারা একমত। তবে তিনি শর্ত দিয়েছেন—যদি এনসিসি গঠনের মাধ্যমে নির্বাহী ক্ষমতা খর্ব করা হয়, তাহলে তারা ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করবেন। অর্থাৎ, বিষয়টি শর্তসাপেক্ষ।”

তিনি ব্যাখ্যা করেন, এনসিসি হলো একটি বিশেষ কাউন্সিল, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদগুলো—যেমন নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন (PSC), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)—এর চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ করা হবে। এই কাউন্সিলের সদস্য হবেন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি এবং আরও কয়েকজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি।

এই ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো আর এককভাবে কোনো দলের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। বরং বিরোধী দলগুলোর মতামত দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। ফলে সিদ্ধান্তে ভারসাম্য আসবে এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের সম্ভাবনা বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, “এই কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে চাইলেই যাকে-তাকে বসিয়ে নির্বাচন ডাকাতি, দুদককে ব্যবহার করে সম্পদ লুটপাট বা পিএসসিকে প্রভাবিত করে দলীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়ার মতো কাজ আর সহজ হবে না।”

“বাংলাদেশের বাস্তবতায় যদি আমরা প্রকৃত সিস্টেম সংস্কার করতে চাই, তাহলে অন্তত সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ অবশ্যই এনসিসি বা অনুরূপ কাউন্সিলের মাধ্যমে হওয়া উচিত,”—জানান সারজিস আলম।

তিনি বলেন, “বিএনপি যদি বলে, ‘হয় প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ ১০ বছর, নয়তো এনসিসি গঠিত হবে না,’ তাহলে সেটা দেশের স্বার্থ নয়, বরং দলের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয় বলে প্রতীয়মান হয়। মনে হচ্ছে, বিএনপি ধরে নিয়েছে তারা শিগগিরই ক্ষমতায় আসবে, তাই সবাই মিলে এনসিসি গঠন করে যেন তাদের ক্ষমতা সীমিত না হয়, সেই চিন্তা থেকেই এ আপত্তি।”

“বিএনপির উচিত—নিজেদের ক্ষমতার আসনে না বসিয়ে বরং নিরপেক্ষভাবে বিষয়টি মূল্যায়ন করা। এমনকি তারা নিজেদের বিরোধী দল হিসেবেও কল্পনা করে এই প্রস্তাবকে মূল্যায়ন করতে পারে। কারণ কোনো দলই স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকবে না।”

সারজিস আলম স্পষ্টভাবে বলেন, “যদি আমাকে বেছে নিতে হয়—প্রধানমন্ত্রীর ১০ বছরের মেয়াদ নাকি এনসিসি, তবে আমি দেশের স্বার্থে নির্দ্বিধায় এনসিসিকেই বেছে নেব। মৌলিক সংস্কারের প্রশ্নে কোনো আপস করা যায় না।