প্রথম দিনের বৈঠকে না যাওয়ার কারণ জানাল জামায়াত
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন সংক্রান্ত আলোচনায় অর্থ বিল ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মত প্রকাশের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রিয়াজ।
তিনি বলেন, নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে ১০০টি স্থায়ী আসন রাখার বিষয়ে দলগুলো নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। তবে, কোন কাঠামো বা পদ্ধতিতে এই আসনগুলো নির্ধারিত হবে, তা ভবিষ্যতে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। আশা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ নিয়ে কিছু দল আপত্তি জানিয়েছে বলেও জানান আলী রিয়াজ। তাদের মতে, বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। আলোচনা এগিয়ে চলছে, যা একটি ইতিবাচক দিক। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগ বিষয়ে তিনি জানান, সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদের পাশাপাশি ৪৮ (৩) ধারা সংশোধনের বিষয়ে একটি প্রাথমিক ঐকমত্য হয়েছে। মাত্র দুটি দল ছাড়া সবাই এই বিষয়ে একমত হয়েছে। আলোচনাটি আবার আগামী সপ্তাহে চলবে।
জামায়াত ইসলামী আলোচনায় অংশ না নেওয়ায় প্রশ্ন উঠলে তিনি বলেন, আমরা জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি, তারা আজকের (বুধবারের) বৈঠকে অংশ নেবেন।
তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে দুটি রাজনৈতিক দল আপত্তি জানিয়েছে। এ বিষয়ে আলী রিয়াজ বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল অভিযোগ করতেই পারে। তবে কমিশন নিরপেক্ষভাবেই কাজ করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, সংস্কারের বিষয়ে কমিশনের অনেক প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে, যদিও সেগুলো তাদের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত ছিল না। জুডিশিয়াল সংস্কার, ম্যাজিস্ট্রেসি, দুদক এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার নানা বিষয়ে দলের অবস্থান ইতিবাচক।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ১৭ জুন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক দিন হয়ে থাকবে। কারণ, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মত প্রকাশের বিষয়ে ঐকমত্য গঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, ন্যূনতম অনেক বিষয়ে ঐকমত্য সৃষ্টি হচ্ছে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, কমিশনের ভূমিকা কিছু কিছু ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্ট মনে হয়েছে। কারও প্রতি বেশি গুরুত্ব দিলে এই সংস্কার প্রক্রিয়ার সার্বজনীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এখনো নির্বাচন হয়নি, তাই আগে থেকেই দলগুলোর গুরুত্ব নির্ধারণ করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আতাউর রহমান জানান, তাদের দল সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারকে সমর্থন করেছে, শুধু অর্থ বিল ও আস্থা ভোট বাদে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, জুলাই সনদকে চূড়ান্ত করতে হলে আন্দোলনের সকল অংশীজনের মতামতকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। সনদের বাস্তবায়নে গণপরিষদ বা গণভোটের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন তিনি। তবে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে এনসিপির প্রশ্ন রয়েছে।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা বলেন, ৭০ অনুচ্ছেদ, নারী আসন, উচ্চকক্ষ এবং বিচারপতি নিয়োগ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ৭০ অনুচ্ছেদ তারা সম্পূর্ণ বাতিল চাইলেও, ঐকমত্যের স্বার্থে অর্থ বিল ও আস্থা ভোটে ব্যতিক্রম মেনে নিয়েছেন। সংবিধান সংশোধনী ও যুদ্ধাবস্থা সংক্রান্ত ভোটাধিকার নিয়েও তাদের দ্বিমত রয়েছে।
বিএনপিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় বৈঠকে অংশ নেয়নি জামায়াত
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার বৈঠকে জামায়াত ইসলামী অংশ নেয়নি। দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপিকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ায় তারা এই বৈঠক এড়িয়ে যায়। তবে আজ (বুধবার) অনুষ্ঠেয় বৈঠকে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলটি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে।
গতকাল রাতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, তারা আজকের বৈঠকে অংশ নেওয়ার বিষয়ে ভাবছে। তবে এর আগে নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “আমরা অংশ নিচ্ছি না,” এর বাইরে তিনি কিছু বলতে চাননি।
জামায়াত নিয়ে প্রেস সচিবের মন্তব্য
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আজকের বৈঠকে জামায়াতের যোগদানের বিষয়ে তারা আশাবাদী। তিনি বলেন, কমিশন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে এবং জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব সমানভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে যেসব অভিযোগ উঠছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছি। সংস্কার বাস্তবায়নে চলমান আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
No comments