Header Ads

ইশরাকের আন্দোলন নিয়ে দুই মত বিএনপিতে

  
 

ইশরাকের আন্দোলন নিয়ে দুই মত বিএনপিতে

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে শপথ গ্রহণের দাবিতে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনের ফলে নগর ভবন ৩৩ দিন ধরে অচল। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও ইশরাকের অবস্থানপত্রের মধ্যে দ্বন্দ্বে সংকট আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্য মনে করছেন, এখন এই আন্দোলন থেকে সরে আসা উচিত ইশরাক হোসেনের। দলটির অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে, তার পর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া দলীয় কৌশলের পরিপন্থী। আন্দোলন চালালে সরকারের কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে এবং বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে।

স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, “লন্ডনের বৈঠকের পর এই আন্দোলন সমর্থনের প্রয়োজন নেই। এতে ইশরাকের ইমেজ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি দলীয় ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে। এখন আমাদের লক্ষ্য জাতীয় নির্বাচন।”

তবে বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজন নেতার মত ছিল ভিন্ন। তারা মনে করেন, হঠাৎ করে আন্দোলন বন্ধ করলে জনগণের মধ্যে ভুল বার্তা যাবে যে, বিএনপি সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে। এতে বিরোধী পক্ষ সমালোচনার সুযোগ পেয়ে যাবে। তাই আন্দোলন সীমিতভাবে চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তারা। তবে বৈঠকে এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

এদিকে সোমবার রাতে ইশরাককে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়, যেখানে তার সঙ্গে হাইকমান্ডের বৈঠক হয়।

উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি

এক সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক হোসেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেন এবং দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য উপস্থাপন করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন উপদেষ্টা। শপথ না নেওয়ার পেছনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে।”

ইশরাক অভিযোগ করেন, “যদি উপদেষ্টার বক্তব্য সঠিক হয়, তাহলে ভবিষ্যতে যেকোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির শপথ গ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। একজন ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট করিয়ে বিজয়ী প্রার্থীর শপথ আটকে দিতে পারবেন।”

তাঁর দাবি, “উপদেষ্টা রাজনৈতিক ও আর্থিক সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে তার পছন্দের একজনকে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছেন।”

সরকার ও বিশেষজ্ঞদের অবস্থান

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, মেয়র ইস্যুতে স্থানীয় সরকার বিভাগ কোনো আইন লঙ্ঘন করেনি। গেজেটের মেয়াদ এবং সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় শপথ নেওয়ার আর কোনো আইনি সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, শপথ না নিয়েও ইশরাক সরকারি কাজে বাধা দিচ্ছেন, অফিস দখল করে বসেছেন, যা ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, গেজেট প্রকাশের পরও মেয়াদ থাকা অবস্থায় শপথ না পড়ানো সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এখন এর সমাধান আদালতের মাধ্যমেই হওয়া উচিত।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদ বলেন, “করপোরেশনের মেয়াদ থাকাকালীন শপথ না পড়ানো ভুল ছিল। এখন আর শপথের সুযোগ নেই। নগর ভবন দখল করে থাকা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।”

জনদুর্ভোগ

চলমান আন্দোলনের কারণে নাগরিক সেবার অধিকাংশ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। জন্মনিবন্ধন সংশোধন, ট্রেড লাইসেন্স, ময়লা পরিষ্কার, মশা নিধন ও অন্যান্য কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

জুরাইনের বাসিন্দা রফিক মিয়া জানান, মেয়ের জন্মনিবন্ধন সংশোধনের জন্য ২০ দিন ধরে ঘুরছেন, কিন্তু কাজ হয়নি।

ব্যবসায়ী রাজীব হোসেন ট্রেড লাইসেন্স করতে এসে ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, “আন্দোলন হোক, কিন্তু সেবা তো বন্ধ করা উচিত না। সাধারণ মানুষ কী দোষ করল?”

ডিএসসিসির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, “দপ্তরের অধিকাংশ কাজ বন্ধ। অল্প কিছু জরুরি কাজ ছাড়া নাগরিকদের কোনো সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”

আন্দোলনের ভবিষ্যৎ

ইশরাক জানিয়েছেন, আন্দোলনের মধ্যেই তিনি সংস্থাটির ৭০টি ওয়ার্ডের সচিব এবং পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শকদের সঙ্গে সভা করেছেন। একইসঙ্গে তার সমর্থকরা নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি সতর্ক করে বলেন, “সংকটের সমাধান না হলে আবারও আন্দোলন রাজপথে গড়াবে। সরকার ও উপদেষ্টারা এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।”

এই অবস্থার উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আদালতের রায় এবং প্রশাসনিক স্পষ্টতা প্রয়োজন বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

No comments

Powered by Blogger.