এবি পার্টির ৩৬ দিনব্যাপী 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান' উদযাপন কর্মসূচি
আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) জুলাই মাসজুড়ে ৩৬ দিনব্যাপী ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ উদ্যাপন করবে। দলটি একে অনুপ্রেরণা, আত্মপর্যালোচনা ও প্রত্যয়দীপ্ত অঙ্গীকার হিসেবে দেখছে। শুক্রবার (২৭ জুন) বেলা ১১টায় রাজধানীর বিজয়নগরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু।
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রক্ষমতা পরিবর্তনের মাধ্যম নির্বাচন হলেও, ক্ষমতাসীনরা সবসময় তা এড়িয়ে জোরপূর্বক ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ১৯৭০-এর নির্বাচন আদায় সম্ভব হলেও, পাকিস্তানি জান্তা সে নির্বাচনের ফল মেনে নেয়নি। বরং গণহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। ফলে মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন মানচিত্র, পতাকা ও ভূখণ্ড অর্জন করে।”
তিনি আরও বলেন, “১৯৯০ সালের গণআন্দোলনের পর ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, যা পরবর্তীতে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। তখন তিন জোটের রূপরেখার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন শাসন ব্যবস্থা তত্ত্বাবধায়কসহ সব কিছুকে ধ্বংস করে দিয়েছে।”
মঞ্জু বলেন, “শেখ হাসিনার পতন শুধু নির্বাচনের মাধ্যমে হয়নি। হাজারো মানুষের রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেই তাকে ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে হয়েছে। তাই শুধু নির্বাচন করলেই গণঅভ্যুত্থানের অঙ্গীকার পূর্ণ হয় না। একাত্তর, নব্বই এবং ২০২৪-এর অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সকলকে ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন আদায়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরেন কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম। কর্মসূচিতে রয়েছে—
৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচির তালিকা:
-
১ জুলাই: আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান – জাতীয় প্রেসক্লাব
-
২-১৩ জুলাই: ‘কোটা না মেধা’ শীর্ষক চিত্রপ্রদর্শনী – বিজয়-৭১ চত্বর
-
১৪ জুলাই: প্রতীকী মিছিল – বিজয়-৭১ চত্বর
-
১৫ জুলাই: ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার দাবি জানিয়ে জাতিসংঘ মিশনে স্মারকলিপি প্রদান
-
১৬ জুলাই: দোয়া মাহফিল ও কালো পতাকা মিছিল – রংপুর, ফেনী ও ঢাকা
-
১৭ জুলাই: গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ – বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে
-
১৮ জুলাই: কফিনবাহী প্রতীকী রোডমার্চ – যাত্রাবাড়ী থেকে উত্তরা
-
১৯ জুলাই: মৌন মিছিল – হেলিকপ্টার গুলিবর্ষণের ঘটনার স্মরণে
-
২০ জুলাই: প্রবাসীদের ‘রেমিট্যান্স শাটডাউন’ দিবস উপলক্ষে আলোচনা – লন্ডন, দুবাই ও মালয়েশিয়ায়
-
২১ জুলাই: আলেম-ওলামা সম্মাননা – বিজয়-৭১ চত্বর
-
২২ জুলাই: শহীদ স্মরণে মিছিল – চট্টগ্রাম
-
২৩ জুলাই: আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার দাবি জানিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে চিঠি প্রেরণ
-
২৪ জুলাই: নারী সম্মাননা অনুষ্ঠান – জাতীয় প্রেসক্লাব
-
২৫ জুলাই: শ্রমিক সমাবেশ – গাজীপুর
-
২৬ জুলাই: রায়েরবাজার গণকবরে শ্রদ্ধা ও দোয়া
-
২৭ জুলাই: আইনজীবী সম্মাননা ও মতবিনিময়
-
২৮ জুলাই: চিকিৎসক সম্মাননা
-
৩০ জুলাই: আন্দোলনে আহতদের সঙ্গে মতবিনিময়
-
৩১ জুলাই: শিল্পী, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকদের জন্য চা-চক্র
-
১ আগস্ট: কারারুদ্ধ নেতাদের সম্মাননা
-
২ আগস্ট: সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়
-
৩ আগস্ট: কর্মসূচি ঘোষণার বার্ষিকী উপলক্ষে প্রেস ব্রিফিং ও পদযাত্রা – শহীদ মিনার
-
৪ আগস্ট: জাতীয় পতাকা মিছিল – বিজয়-৭১ চত্বর
-
৫ আগস্ট: বর্ষপূর্তি সংহতি সমাবেশ, ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী ও শহীদদের মাগফিরাত কামনায় জেয়াফত – বিজয়-৭১ চত্বর
উপস্থিত নেতৃবৃন্দ:
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, আনোয়ার সাদাত টুটুল, ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি, এবিএম খালিদ হাসান, ছাত্রপক্ষের আহ্বায়ক মো. প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল বাসেত মারজান, শ্রম সম্পাদক শাহ আব্দুর রহমান, নারী উন্নয়ন সম্পাদক ফারাহ নাজ সত্তার, সহকারী দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট শরণ চৌধুরী, আব্দুল হালিম নান্নু, মশিউর রহমান মিলু, সহকারী প্রচার সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ, রিপন মাহমুদ, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান ব্যাপারী, সহকারী স্বেচ্ছাসেবা সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন রমিজ, কেফায়েত হোসেন তানভীর এবং মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব আহমাদ বারকাজ নাসিরসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এই ৩৬ দিনের কর্মসূচিকে এবি পার্টি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে দেখছে।
No comments