সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঈদের পর কঠোর আন্দোলনে নামছে
সাত কলেজের আন্দোলনের মুখে পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের উদ্যোগ, দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীদের নতুন কর্মসূচির হুঁশিয়ারি
টানা আন্দোলনের পর ঢাকার সাত সরকারি কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল এবং সম্মানজনকভাবে পৃথকীকরণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার চলতি বছরের জানুয়ারিতে। একই সময়, এসব কলেজের শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র পরিচয় নিশ্চিত করতে এবং তাদের সমন্বয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ইউজিসির নেতৃত্বে একটি কমিটি ইতোমধ্যে পাঁচ মাস ধরে কাজ করছে। তাদের প্রস্তাবিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাব্য নাম ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’। একই সঙ্গে, সাত কলেজের সার্বিক প্রশাসনিক সমন্বয়ের দায়িত্বে অন্তর্বর্তী প্রশাসক হিসেবে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক একেএম ইলিয়াসকে নিয়োগ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শুধু নাম প্রস্তাব ও অন্তর্বর্তী প্রশাসক নিয়োগই হয়েছে। দাবিগুলোর বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন—আগামী ১৬ জুনের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি না হলে তারা আবারও আন্দোলনে নামবেন। তবে এবার রাস্তা বন্ধ না করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি:
১৭ মে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন:
১. ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন
২. দুই কার্যদিবসের মধ্যে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ
৩. পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রকাশ
৪. এক মাসের মধ্যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি
৫. আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একাডেমিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা
এই দাবির প্রেক্ষিতে সরকার অন্তর্বর্তী প্রশাসক নিয়োগ দিলে শিক্ষার্থীরা আপাতত আন্দোলন স্থগিত করেন। কিন্তু বাকি চারটি দাবির বাস্তবায়নে এখনও কোনো অগ্রগতি নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা ও ভর্তি সংক্রান্ত ঘোষণা দুই কার্যদিবস ও পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে হওয়ার কথা থাকলেও, এখন পর্যন্ত এসব বিষয়ে কোনো ঘোষণা আসেনি।
ভবিষ্যৎ কর্মসূচির আভাস
বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী এবং সাত কলেজ আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র শাহাদাত হোসাইন বলেন,
“অধ্যাদেশ একটি সময়সাপেক্ষ বিষয়, এখানে আইনি কিছু জটিলতা আছে। আমরা কর্তৃপক্ষকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই। তবে এর মধ্যেই যদি অন্তত রূপরেখা প্রকাশ না করা হয়, তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচির দিকে যাব।”
তিনি আরও বলেন,
“যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, তাদের একাডেমিক কোনো সুযোগ-সুবিধা যেন ব্যাহত না হয়, সেটিই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। প্রশাসনও সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”
চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সরকার যদি ১৬ জুনের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি না করে, তাহলে তারা আবার আন্দোলনে নামবেন। তবে diesmal তারা সরাসরি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও করে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবেন, যাতে জনদুর্ভোগ না হয়।
এই মুহূর্তে সরকার ও ইউজিসির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো—দ্রুত রূপরেখা প্রকাশ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে দীর্ঘদিনের আন্দোলনের অবসান ঘটে এবং শিক্ষার্থীদের আস্থার সংকট দূর হয়।
No comments