বিএনপি নেতাকর্মীদের ঈদে নির্বাচনী প্রস্তুতির নির্দেশ
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দলীয় নেতাকর্মীদের ‘নির্বাচনী প্রস্তুতির’ অংশ হিসেবে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি। এখনো নির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না হলেও ঈদকে ঘিরে জনগণের কাছে দলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে তৎপর হতে বলা হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, ঈদের ছুটি ও পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী এবং জেলা-মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সাধারণ মানুষের পাশে থাকবেন। ঈদ উদযাপনের পাশাপাশি জনসম্পৃক্ত বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমেও অংশ নেবেন তারা।
দলের নেতারা বলছেন, আওয়ামী সরকারের শাসনামলে দমন-পীড়নের কারণে বিগত ১৫-১৬ বছর ধরে ঈদে এলাকার মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে থাকতে পারেননি। তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পতনের পর এবারই প্রথম বিএনপি মুক্ত পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছে।
সরকারি ছুটির পাশাপাশি দীর্ঘ সময় ঈদের আমেজে থাকবে দেশ। এ সময় নেতাকর্মীরা এলাকায় গিয়ে কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করবেন। ঈদের সময় প্রার্থীরা সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানো, জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নজরে আসার চেষ্টা করবেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি সংসদীয় আসনে ৩-৪ জন করে প্রার্থী রয়েছেন। তারা এই সময় বিভিন্ন কার্যক্রমের ছবি, ভিডিও ও প্রতিবেদন দলীয় হাইকমান্ডের কাছে পাঠাবেন। অনেকেই রিপোর্ট পাঠাবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছেও।
এছাড়াও, দলের ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার কর্মসূচির বিষয়গুলো ঈদের পুনর্মিলনী ও সামাজিক অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে বলা হয়েছে। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি শাসন ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে—এ বার্তাও পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “এবারের ঈদে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদযাপন হবে। নেতাকর্মীদের আচরণে যেন কেউ কষ্ট না পায়, সেদিকে সচেতন থাকতে হবে। জনগণের পাশে থাকতে হবে।”
তবে ঈদের সময় বিএনপি রোডম্যাপ ইস্যুতে তুলনামূলকভাবে নমনীয় থাকবে। রোডম্যাপ নিয়ে উত্তেজনা আপাতত বিরত রাখা হবে। জুন-জুলাইয়ের মধ্যে যদি সরকার নির্বাচন বিষয়ে স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না করে, তখন দলটি রাজনৈতিকভাবে কঠোর অবস্থান নিতে পারে।
বিএনপির নেতারা ইতোমধ্যে এলাকায় প্রচারণা শুরু করেছেন। কেউ কেউ গুম-খুনের শিকার নেতাকর্মীদের পরিবারকে ঈদ উপহার দিচ্ছেন। অনেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে ঈদসামগ্রী বিতরণ করছেন।
খালেদা জিয়ার মুক্ত পরিবেশে ঈদ উদযাপন
দীর্ঘ সাত বছর পর মুক্ত পরিবেশে এবার ঢাকায় গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কারাবরণের পর দেশে মুক্ত পরিবেশে এবারই প্রথম ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছেন তিনি।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্য থেকে দুই পুত্রবধূকে নিয়ে দেশে ফিরেন খালেদা জিয়া। তবে ছোট পুত্রবধূ সৈয়দা শামীলা রহমান যুক্তরাজ্যে ফিরে গেছেন। বড় পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমানও ঈদের আগেই যুক্তরাজ্যে ফিরবেন, যেখানে তারেক রহমান ও মেয়ে জায়মা রহমান ঈদ উদযাপন করবেন।
ঈদের রাতে বিএনপির সিনিয়র নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন। ঈদের দিন সকালে জিয়াউর রহমানের মাজারে ফাতেহা ও দোয়া করবেন।
নেতাদের ঈদের পরিকল্পনা
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ঢাকায় ঈদ উদযাপন শেষে নিজ নিজ এলাকায় যাবেন। মির্জা আব্বাস ঢাকার শাহজাহানপুরে, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কেরানীগঞ্জে, ড. আব্দুল মঈন খান নরসিংদীতে, আমীর খসরু চট্টগ্রামে, সালাহউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজারে এবং ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিরাজগঞ্জে ঈদ করবেন।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকায় ঈদ করবেন।
এই ঈদে বিএনপির ফোকাস থাকবে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো ও ভবিষ্যতের নির্বাচনী লড়াইয়ের জন্য সংগঠনকে প্রস্তুত করা। ঈদকে ঘিরেই তৃণমূলে দলের কর্মকৌশল বাস্তবায়নের নতুন ধাপ শুরু হয়েছে।
No comments