Header Ads

আওয়ামী লীগ যাওয়ার পরেই বিদেশ থেকে টাকার বন্যা! রিজার্ভে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ

      

আওয়ামী লীগ যাওয়ার পরেই বিদেশ থেকে টাকার বন্যা! রিজার্ভে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ


      


আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে বৈধ পথে প্রবাসীদের অর্থ পাঠানো বেড়েছে। এই বাড়তি রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরিয়েছে। এর ফলে রিজার্ভের ওপর চাপ কমেছে। গত ১০ মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আর ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে না। একই সময়ে বাজেট সহায়তা ও বিভিন্ন বৈদেশিক ঋণ আকারে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি আসায় রিজার্ভ আরও বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় বকেয়া দুই কিস্তিতে ১৩৪ কোটি ডলার এসেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্বব্যাংকের ৫০ কোটি ডলার এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-এর ৯০ কোটি ডলার ঋণ। সব মিলিয়ে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০.৫১ বিলিয়ন ডলার (৩ হাজার ৫১ কোটি ডলার)। তবে আইএমএফের গৃহীত হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী এই রিজার্ভের পরিমাণ ২৫.৫১ বিলিয়ন ডলার এবং ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৯.৮০ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, রিজার্ভ মূলত বৈদেশিক ঋণের অর্থে বাড়ছে। তবে এগুলো দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পসুদে নেওয়া হওয়ায় নিকট ভবিষ্যতে চাপ তৈরি করবে না। এই অর্থ দিয়ে বাজেট বাস্তবায়ন, ব্যাংক ও রাজস্ব খাত সংস্কার করা হবে। আর সংস্কার কার্যকর হলে রপ্তানি ও রাজস্ব আয় বাড়বে, যা অর্থনীতিকে চাঙা করবে।

এদিকে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরু থেকেই প্রবাসী আয়ে বড় উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৩.৯১ বিলিয়ন ডলার। অথচ চলতি অর্থবছরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্তই ২৯.৪৬ বিলিয়ন ডলার এসেছে, যা প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার বেশি। রপ্তানিতে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থাকায় এবং আমদানি মাত্র ৫ শতাংশ বেড়ায় রিজার্ভের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

২০২৪ সালের ৩১ জুলাই, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সপ্তাহে দেশের মোট রিজার্ভ ছিল ২৫.৯২ বিলিয়ন ডলার এবং বিপিএম ৬ অনুযায়ী ২০.৪৮ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ কয়েক মাসের ব্যবধানে রিজার্ভে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি এসেছে।

বিশেষজ্ঞ ও ব্যাংকাররা বলছেন, সরকারের পরিবর্তনের পর অর্থ পাচার কমে গেছে এবং বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিদেশি উন্নয়ন অংশীদারদের আস্থাও বেড়েছে। ফলে ঋণ সহায়তা পাওয়া সহজ হচ্ছে, যার প্রভাব সরাসরি রিজার্ভে পড়ছে।

ডলারের বাজারে স্বস্তির ইঙ্গিত

গত তিন বছর ধরে ডলারের সংকটে ভোগা দেশের অর্থনীতি এখন কিছুটা স্বস্তির দিকে যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, যার প্রভাব পড়েছিল দেশের আমদানি খরচ ও মূল্যস্ফীতিতে। তবে এখন ডলারের জোগান বাড়ায় সেই চাপ কিছুটা কমছে।

আগে প্রবাসী এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ব্যাংকগুলো ১২৩ টাকার বেশি দামে ডলার কিনত। এখন তা কমে ১২২.৭০ থেকে ১২২.৮০ টাকায় নেমেছে। এতে আমদানিকারকেরা ১২৩-১২৪ টাকায় ডলার কিনে দায় মেটাতে পারছেন, যা ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা এনেছে।

ব্যাংকারদের মতে, আওয়ামী লীগের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া কড়াকড়ি ব্যবস্থার কারণে অর্থ পাচার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। একই সঙ্গে নজরদারি বৃদ্ধি পাওয়ায় রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৈধ পথে বাড়ছে, যা আর্থিক খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে।

অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, “ডলারের বাজারে স্বস্তি আসা অবশ্যই সুখবর। তবে রিজার্ভ ঋণের ওপর নির্ভর না করে স্বাভাবিকভাবে বাড়লে সেটা বেশি ইতিবাচক হতো। কারণ, এসব ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তবে যেহেতু ঋণগুলো দীর্ঘমেয়াদি, তাই চাপ অনেকটা সহনীয় থাকবে। সংস্কারমূলক কাজগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের অর্থনীতির জন্য তা ভালো হবে।”

শেষ কথা

রিজার্ভের বর্তমান ঊর্ধ্বগতি মূলত প্রবাসী আয় এবং বৈদেশিক ঋণের কারণে হলেও এটি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় স্বস্তির খবর। সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ, বিদেশি আস্থা এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথে এগিয়ে নিচ্ছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই সমাধানের জন্য প্রয়োজন আরও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি ও বৈধ পথে প্রবাসী আয় নিশ্চিত করা।

No comments

Powered by Blogger.