৮৮% নিম্ন আয়ের মানুষ দিনে অন্তত এক বেলা পাউরুটি-বিস্কুট খায়
দেশের ৮৮ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ প্রতিদিন অন্তত এক বেলা পাউরুটি কিংবা বিস্কুট খাচ্ছেন। মাসে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করা মানুষের মধ্যে ৬০ শতাংশই সকালের খাবার বাদ দেন সময়ের অভাব এবং অতিরিক্ত খরচের কারণে।
এই তথ্য উঠে এসেছে ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক পরিচালিত এক জরিপে। চলতি বছরের মার্চ মাসে দেশের ১৫টি স্থানে ১,০২২ জন মানুষের ওপর এই জরিপটি পরিচালিত হয়। এতে দেখা যায়, অর্থের অভাবে ৯৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী কখনো না কখনো ভারী খাবার বাদ দিতে বাধ্য হন। এর বদলে তাঁরা পাউরুটি, কলা বা বিস্কুট খেয়ে থাকেন। বিশেষ করে দুপুর বা বিকেলের খাবার অনেক সময় বাদ পড়ে।
এই জরিপের তথ্য বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে আয়োজিত ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তা ও ভ্যাট’ শীর্ষক সেমিনারে উপস্থাপন করা হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, এবং স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি দৌলত আকতার মালা। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া ও প্রথম আলোর সহকারী বার্তা সম্পাদক পার্থ শঙ্কর সাহা।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্কের গবেষণাপ্রধান ইমরুল হাসান বলেন, “দেশে মূল্যস্ফীতি এখনো ৯ শতাংশের বেশি। তার সঙ্গে রয়েছে যুব বেকারত্ব এবং আয়ের বৈষম্য। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পাউরুটি ও বিস্কুটের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ এবং শিক্ষার্থীদের এই পণ্যগুলো বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৭০ শতাংশ মানুষ প্রত্যাশা করেছিলেন, বাজেটে অন্তত এই পণ্যগুলোর ওপর থেকে ভ্যাট তুলে নেওয়া হবে। কিন্তু তা হয়নি।”
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান তাঁর বক্তব্যে বলেন, “পাউরুটি ও বিস্কুটের মতো পণ্যে ভ্যাট থাকা উচিত কি না, তা নিয়ে নীতিগত বিতর্ক থাকতে পারে। করনীতির ক্ষেত্রে রাজস্ব লক্ষ্যের পাশাপাশি নানা আন্তর্জাতিক শর্তও বিবেচনায় রাখতে হয়। এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের জন্য অনেক কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। এর একটি অংশ হিসেবে শুল্কহার ধাপে ধাপে কমাতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বাজেটের আকার এ বছর কমানো হয়েছে যাতে মানুষের ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। বাজেট ছোট হওয়ায় ধরতে হবে—রাষ্ট্র সঞ্চয় করেছে এবং ভবিষ্যতের ঋণের চাপও কিছুটা কমেছে।”
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও মন্তব্য করেন, “ভ্যাট বাড়ানো হলেও ব্যবসায়ীরা যদি তা ভোক্তাদের ওপর পুরোপুরি চাপিয়ে দেন, তাহলে আমাদের তা নজরে রাখা উচিত। যেখান থেকে সরকার কর নেওয়ার কথা, তা ঠিকভাবে করতে পারলে দরকারি ক্ষেত্রে করছাড়ও দেওয়া সম্ভব হতো।”
তিনি জানান, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সংখ্যা এবার ১৭ লাখ ছাড়িয়েছে, যা গতবার ছিল মাত্র ৫ লাখ। এবার জুলাই থেকেই রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। এ ছাড়া ব্যবসার লাইসেন্স ও অনুমোদনের জন্য ‘ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো’ চালু হচ্ছে, যার মাধ্যমে ১৯টি সংস্থার ১১০ ধরনের লাইসেন্স, অনুমোদন ও সনদ অনলাইনে পাওয়া যাবে।
এনবিআরের চলমান অভ্যন্তরীণ আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “রাজস্ব আদায়ে কিছুটা সমস্যা হলেও আমাদের প্রথম দায়িত্ব দেশের স্বার্থ রক্ষা করা। আইন, সংস্কার বা আন্দোলন—সব কিছুই দেশের উন্নয়নের জন্য হওয়া উচিত।”
বাংলাদেশ বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, “নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যে কোনো ভ্যাট থাকা উচিত নয়। যদি ভ্যাট নিতেই হয়, তাহলে তা ৩ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা উচিত ছিল। আমি এবারের বাজেটে ৩ শতাংশ ভ্যাটের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এতে এফবিসিসিআইও সম্মত ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। বরং ভ্যাট বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে।
No comments