নেক সন্তান লাভের জন্য করণীয় আমলসমূহ
সন্তান যদি অবাধ্য হয়, তবে মা-বাবার জীবন হয়ে ওঠে দুঃখময়। তাই প্রতিটি বাবা-মারই প্রত্যাশা থাকে—তাদের সন্তান যেন হয় নেক, সৎ এবং অনুগত। নেক সন্তান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এক অমূল্য নিয়ামত। কোরআন ও হাদিসে নেক সন্তান লাভের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমলের কথা বলা হয়েছে। নিচে এমনই তিনটি কার্যকর আমল তুলে ধরা হলো, যেগুলো পালনে মহান আল্লাহ তাআলা নেক সন্তান দান করতে পারেন।
১. আল্লাহর কাছে দোয়া করা
আল্লাহ তাআলা বান্দাকে তার কাছে চাইতে বলেছেন। কোরআনে এমন অনেক দোয়া আছে, যা পাঠ করে আমরা নেক সন্তান চাইতে পারি। যেমন—
سورة الفرقان, আয়াত ৭৪:
رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ أَزۡوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعۡيُنٍ وَاجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا
উচ্চারণ:
“রাব্বানাহা হাব লানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররাতা আয়্যুনিন ওয়াজআলনা লিলমুত্তাক্বিনা ইমামা।”
অর্থ:
“হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের আমাদের জন্য নয়ন-প্রিয় কর এবং আমাদের মুত্তাকিদের জন্য আদর্শ বানাও।”
এই দোয়া শুধু নেক সন্তান নয়, নেক জীবনসঙ্গীর জন্যও চাওয়া।
আর যাদের এখনও সন্তান হয়নি, তাদের জন্য কোরআনে নবী জাকারিয়া (আ.)-এর কিছু দোয়া রয়েছে—
সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৮৯:
رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ
উচ্চারণ:
“রব্বি লা তাযারনি ফার্দান ওয়া আনতা খাইরুল ওয়ারিসীন।”
অর্থ:
“হে আমার পালনকর্তা! আমাকে নিঃসন্তান রেখো না, নিশ্চয়ই তুমিই সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী।”
আরেকটি বিখ্যাত দোয়া:
সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৩৮:
رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً ۖ إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ
উচ্চারণ:
“রব্বি হাবলি মিল্লাদুংকা জুররিয়্যাতান ত্বইয়্যেবাহ। ইন্নাকা সামিউদ দুআ।”
অর্থ:
“হে আমার রব! তুমি তোমার পক্ষ থেকে আমাকে একটি পবিত্র (নেক) সন্তান দান করো। নিশ্চয়ই তুমি দোয়া শ্রবণকারী।”
২. সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা
নেক সন্তান লাভের আগেই শয়তানের কুপ্রভাব থেকে বাঁচার প্রস্তুতি নিতে হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাম্পত্য জীবনের একটি বিশেষ সময়ের আমলের কথা বলেছেন—
দাম্পত্য মিলনের সময় দোয়া:
بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
উচ্চারণ:
“বিসমিল্লাহি, আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা, ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাকতানা।”
অর্থ:
“আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তানের কাছ থেকে রক্ষা করো এবং তুমি আমাদের যা রিজিক দাও (সন্তান), তাতেও শয়তানের অংশ যেন না থাকে।”
হাদিসে এসেছে:
যদি কেউ এ দোয়া পড়ে স্ত্রী সহবাস করে, এবং এতে সন্তান জন্ম নেয়, তবে সেই সন্তানকে শয়তান কোনোভাবে ক্ষতি করতে পারবে না। (সহীহ বুখারি)
৩. পাপ থেকে দূরে থাকা ও নেক আমল করা
নেক সন্তান পেতে হলে স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই নিজেদের চরিত্র সংশোধন করতে হবে। গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। কারণ, আল্লাহ তাআলা শুধুই তাকওয়াবান এবং নেক বান্দাদের জন্য তার রহমত ও নেয়ামত বর্ষণ করেন।
-
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করুন
-
হারাম উপার্জন ও খারাপ কথাবার্তা থেকে দূরে থাকুন
-
দান-সদকা ও কোরআন তিলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তুলুন
-
পারিবারিক জীবনে ইসলামি আদর্শ মেনে চলুন
আল্লাহ তাআলা কেবল তাকওয়াবানদের দোয়াই কবুল করেন। তাই যদি আপনি চান—আপনার সন্তান হোক নেক, তাহলে নিজেকেও নেক হতে হবে।
শেষ কথা
নেক সন্তান আল্লাহর দান। তবে আল্লাহর এই নিয়ামত পাওয়ার জন্য চেষ্টাও করতে হবে। দোয়া, সুন্নাহর অনুসরণ এবং নিজের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা—এই তিনটি মূল আমলকে জীবনের অংশ করে তুলুন। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ তাআলা আপনাকে নেক, সৎ এবং আপনার চোখের শান্তি এমন সন্তান দান করবেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে নেক সন্তান দান করুন। আমিন।
No comments