ইরান পারমাণবিক বোমা বানাতে পারে দুইটি কারণে
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, ইরান এখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। যদিও ইরানের কাছে অস্ত্র-গ্রেড উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে, তারা এখনো তা দিয়ে বোমা তৈরির পথে এগোয়নি। মার্চে এই বিষয়ে যেমন মূল্যায়ন দেওয়া হয়েছিল, সেটি এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে।
তবে মার্কিন গোয়েন্দাদের একটি অংশ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে—যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ‘ফোর্দো’-তে হামলা চালায় বা ইসরায়েল ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হত্যা করে, তাহলে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের দাবি, ইরান মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই একটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম। তবে মার্কিন গোয়েন্দারা মনে করেন, অস্ত্র তৈরিতে ইরানের কয়েক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এ সময়সীমা নির্ভর করছে ইরান কেমন ধরনের বোমা তৈরি করতে চায় তার ওপর। যদি তারা একটি প্রাথমিক ধরনের বড় আকারের বোমা তৈরি করে, যা ক্ষেপণাস্ত্রে বহনযোগ্য নয়, তাহলে সময় আরও কম লাগতে পারে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইরান ইতোমধ্যে সব উপকরণ সংগ্রহ করেছে। এখন শুধু সর্বোচ্চ নেতার অনুমোদন পেলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অস্ত্র তৈরি সম্ভব। তার এই বক্তব্য ইসরায়েলের মূল্যায়নের সঙ্গে মিলে গেলেও, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান একই—ইরান এখনও বোমা তৈরি শুরু করেনি।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু একাধিকবার বলেছেন, ইরান পারমাণবিক বোমার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে এটি ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রয়োজনে ইসরায়েল এককভাবেও ব্যবস্থা নিতে পারে।
মার্কিন সেনা জেনারেল মাইকেল কুরিলা কংগ্রেসে জানান, ইরান চাইলে এক সপ্তাহের মধ্যে অস্ত্র-গ্রেড ইউরেনিয়াম উৎপাদন করতে পারে এবং তিন সপ্তাহে ১০টি বোমা বানানোর মতো উপাদান জোগাড় করা সম্ভব তাদের পক্ষে। তবে শুধুমাত্র ইউরেনিয়াম থাকলেই যথেষ্ট নয়, বোমাকে ক্ষেপণাস্ত্রে বহনের উপযোগী করে তোলার প্রযুক্তিও প্রয়োজন।
২০০৩ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি একটি ধর্মীয় ফরমান (ফতোয়া) জারি করেছিলেন, যেখানে বলা হয়েছিল, পারমাণবিক অস্ত্র ইসলামবিরোধী এবং তা তৈরি করা নিষিদ্ধ। মার্কিন গোয়েন্দারা বলছেন, এই ফরমান এখনও কার্যকর এবং সেটিই ইরানকে বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রেখেছে।
তবে যেহেতু সব উপাদান এখন ইরানের হাতে রয়েছে, সেহেতু তারা চাইলে দ্রুত অস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। বিশেষ করে যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের চাপ বাড়ে বা সরাসরি সংঘাত শুরু হয়, তাহলে পরিস্থিতি হঠাৎ করেই বদলে যেতে পারে।
No comments