এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন: সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো এই সময়সূচি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
যদিও আশা করা হচ্ছে সব রাজনৈতিক দল শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে, তবুও একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে সরকারের সামনে অনেক কঠিন কাজ রয়েছে। চলুন দেখে নিই, কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
১. রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাব
নির্বাচনের সময়সূচি ঠিক করলেও এখনো দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো ঐকমত্য তৈরি হয়নি। এতে করে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা, সীমানা নির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে দেরি হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের ওপর এর ফলে অনেক চাপ পড়বে।
২. নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন
প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে তিনি সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কিন্তু বিএনপি অভিযোগ করছে—এই সময়সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীনের মতে, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—সরকারকে নিজের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করা। ইতোমধ্যেই পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের স্বাধীনতা রক্ষা করতে বাধা হতে পারে।
৩. নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি
ভোটার তালিকা এখনো আংশিকভাবে হালনাগাদ করা হয়েছে। এছাড়া অনেক কাজ এখনো বাকি। নির্বাচন কমিশনের সদস্য আব্দুর রহমান অবশ্য জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে।
কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সময় খুবই কম। এ সময়ে বাস্তবভিত্তিক সংস্কার কার্যক্রম চালানো কঠিন হবে। তারা মনে করেন, গত কয়েক মাসে যতটা না কাজ হয়েছে, তার চেয়ে বেশি সময় নষ্ট হয়েছে।
৪. অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা
জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস বলেছেন, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন’ মানে শুধু রাজনৈতিক দল নয়—সব ভোটারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। তবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ থাকায়, তাদের ছাড়া নির্বাচন হলে সেটিকে কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক বলা যাবে—এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
ঢাবির অধ্যাপক সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, এখনো ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি হয়নি। জামায়াত, এনসিপি, বিএনপি—সবাই প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এর মধ্যে সরকারকে একটি বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
৫. সংস্কার ও বিচার ব্যবস্থায় অগ্রগতি
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তারা তিনটি বিষয়ে কাজ করছেন—সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন। ঈদের আগেই এসব বিষয়ে অগ্রগতি দেখা যাবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সংস্কার কার্যক্রম খুব ধীর গতিতে চলছে। জুলাই সনদ অনুযায়ী সংস্কার শুরু করলে নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য সময় আরও কমে যাবে।
৬. জনগণের আস্থা অর্জন
ঢাবি অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, অতীতে বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের উদাহরণ রয়েছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে কিছুটা গ্রহণযোগ্য হলেও, দেশের মানুষের কাছে তা ছিল বিতর্কিত। যদি একই ভুল আবার হয়, তবে জনগণের আস্থা আরও কমে যেতে পারে।
No comments