পাবলিক প্লেসে ভিডিও করার আগে যা জানা জরুরি

     

 

 আজকাল প্রায় সবার হাতেই আছে স্মার্টফোন। যে কেউ খুব সহজেই ছবি তুলতে বা ভিডিও করতে পারেন। অনেকেই ব্যক্তিগত বা পারিবারিক মুহূর্তের পাশাপাশি জনসমাগমস্থলে বা পাবলিক প্লেসেও ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। কেউ কেউ তা আপলোড করেন ফেসবুক, ইউটিউব বা অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে শুধু সুযোগ আছে বলেই যেকোনো সময়, যেকোনো পরিস্থিতিতে ভিডিও বা ছবি তোলা উচিত নয়। বিশেষ করে, অন্যের সম্মতি ছাড়া কারও ছবি বা ভিডিও ধারণ করা বা তা অনলাইনে প্রকাশ করা ঠিক নয়।

ধরুন, কেউ ঘুরতে গিয়েছেন বা গণপরিবহনে যাত্রা করছেন। নিজের পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলতে গিয়ে অজান্তেই ফ্রেমে চলে আসতে পারেন অচেনা মানুষ। মেট্রোরেল প্ল্যাটফর্ম কিংবা চলন্ত সিঁড়ির মতো জায়গায় ছবি তুলতে গিয়েও একই ঘটনা ঘটতে পারে। এসব ক্ষেত্রে আশপাশের মানুষদের গোপনীয়তা বজায় রাখা জরুরি।

আরেকটি উদাহরণ ধরুন—আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রুটিন তল্লাশির অংশ হিসেবে কোনো গাড়ি থামিয়েছে। এ সময় অনেকে ভিডিও ধারণ করেন এবং তা অনলাইনে আপলোড করেন। এতে সেই গাড়িতে থাকা ব্যক্তির পরিচিতদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হতে পারে। এমনকি সমাজে তাঁদের নিয়ে গুজব ছড়াতে পারে। তাই এসব স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে ভিডিও ধারণ ও প্রকাশে সতর্ক থাকা জরুরি।

পাবলিক প্লেসে ছবি বা ভিডিও তোলার সময় যা মনে রাখবেন:

• ক্যামেরা ব্যবহার করার সময় খেয়াল রাখুন যাতে ফ্রেমে অচেনা মানুষ না আসে।

• যদি একান্তই কাউকে বাদ দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে তাঁর চেহারা অস্পষ্ট করে দিন বা ফ্রেম থেকে কেটে ফেলুন।

• স্পষ্টভাবে কোনো অচেনা ব্যক্তি—even শিশুও—দেখা গেলে তা অনলাইনে প্রকাশ করা অনুচিত।

• বিশেষ কোনো ঘটনা ঘটলে যেমন—আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি, রাস্তায় ঝামেলা ইত্যাদি—ভিডিও করতে ইচ্ছা হতে পারে। কিন্তু নিজেকে সংযত রাখাই ভালো।

• অন্যের ব্যক্তিগত বা স্পর্শকাতর মুহূর্ত ধারণ করা এক ধরনের অনধিকারচর্চা। সেটি না করাই শ্রেয়।

• কোনো মানবিক কাজ—যেমন: কেউ রাস্তায় খাবার বিতরণ করছেন—দেখলে ভালো লাগতেই পারে। তবু অনুমতি ছাড়া সেই দৃশ্য ধারণ করা ঠিক নয়। যিনি দিচ্ছেন এবং যাঁরা নিচ্ছেন—উভয়ের সম্মতি নেওয়া জরুরি।

• চাইলে আপনি শুধু ঘটনাটির বিবরণ লিখে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করতে পারেন। এতে গোপনীয়তা রক্ষা হয় এবং মানবিক গল্পও বলা যায়।

নেতিবাচক পরিস্থিতিতে করণীয়:

জীবনে অনেক সময় আপনি এমন ঘটনার সাক্ষী হতে পারেন যা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার, মারধর কিংবা বিব্রতকর পরিস্থিতি দেখে তা মোবাইলে ভিডিও করার আগে ভাবুন—এটা কি আসলেই দরকার? বরং সেই অবস্থায় আপনার করণীয় হলো মানবিক দায়িত্ব পালন করা। সম্ভব হলে পরিস্থিতি থামানোর চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য নিন, অথবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করুন।

হ্যাঁ, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে—যেমন: অপরাধী চিহ্নিত করার প্রয়োজনে—ভিডিও কাজে লাগতে পারে। কিন্তু সবাই অপরাধী নন। তাই সব ঘটনা ভিডিও করা উচিত নয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে বিবেচনা, সততা এবং অন্যের গোপনীয়তার প্রতি শ্রদ্ধা রাখা জরুরি।

শেষ কথা:

পাবলিক প্লেসে ভিডিও বা ছবি ধারণ করতে গেলে কেবল নিজের ভালো লাগা বা কনটেন্ট তৈরির কথা ভাবলে চলবে না। অন্যের সম্মান, গোপনীয়তা এবং সামাজিক প্রভাবের দিকটিও খেয়াল রাখতে হবে। সবার প্রতি সম্মান দেখানো ও মানবিক বোধ বজায় রাখাই দায়িত্বশীল আচরণ।