আগামী নির্বাচন হতে হবে সংস্কারের ভিত্তিতেই
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেছেন, আগামী নির্বাচন অবশ্যই সংস্কারের ভিত্তিতে হতে হবে। তিনি বলেন, আগে সংস্কার পরে নির্বাচন”—এই প্রক্রিয়া বদলে দিয়ে নির্বাচন করে পরে সংস্কারের কথা বললে, সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। যেকোনো সময় আপনি নির্বাচন আয়োজন করতে পারেন, কিন্তু তার আগে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। কারণ, সেই সংস্কারই হবে নির্বাচনকে বৈধতার ভিত্তি দেওয়ার মূল উপাদান।
তিনি আরও বলেন, যদি সত্যিকার অর্থেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই, তবে তা সংস্কার ছাড়া সম্ভব নয়। সংস্কার না হলে আগামী নির্বাচন হবে অতীতের যেসব প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হয়েছে, তার চেয়েও খারাপ। বর্তমানে যারা ‘নির্বাচন চাই’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন, তাদের অনেকেই প্রকৃত অর্থে সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে নন। তারা কেবলমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার একটি সিঁড়ি হিসেবেই নির্বাচনের ব্যবহার চান।
এনসিপির এই নেতা দাবি করেন, “যারা মৌলিক রাজনৈতিক সংস্কারের কথা বলছেন, তারাই প্রকৃতপক্ষে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষের শক্তি।” তিনি জানান, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তারা সবাই বিশ্বাস করেন, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য মৌলিক সংস্কার অপরিহার্য। এটা এমন নয় যে তারা নিজেরাই ক্ষমতায় যেতে চান; বরং দেশের স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চাচ্ছেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের কথা তুলে ধরে সারোয়ার তুষার বলেন, যখনই কোনো দল দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, তখনই তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। ১৯৭২ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েই একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিএনপি ২০০১ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী আনে, যার পরিণতিতে দেশে ‘লগি-বৈঠা’ রাজনীতি শুরু হয়। রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, ঢাকার রাজপথে লাশের ওপর নৃত্য চলে। সেই সহিংসতাকে আওয়ামী লীগ বলেছে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’, কিন্তু সেই পথ ধরেই এসেছিল ১/১১-এর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিও তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন, কীভাবে তখন আওয়ামী লীগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মধ্যে সমঝোতা হয়েছিল।
সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা মনে করি সংসদে একটি উচ্চকক্ষ থাকা প্রয়োজন। তবে সেটি যেন সংরক্ষিত নারী আসনের আদলে না হয়। বরং এই উচ্চকক্ষ গঠিত হওয়া উচিত জনমতের ভিত্তিতে, ভোটের অনুপাতে। এতে করে গণতন্ত্রপন্থী ছোট ও মাঝারি দলগুলোর জন্য প্রতিনিধিত্বের সুযোগ তৈরি হবে। সেইসঙ্গে একজন ব্যক্তির ইচ্ছায় রাষ্ট্রীয় কাঠামো পরিবর্তনের ঝুঁকি রোধ করা যাবে।”
সারোয়ার তুষারের মতে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও টেকসই গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হলে এখনই প্রয়োজন রাজনৈতিক সংস্কার এবং সর্বদলীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি নতুন পথরেখা তৈরি।
No comments