Header Ads

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সংবিধান পরিপন্থি

 

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সংবিধান পরিপন্থি


গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেছেন, আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যা সংবিধান পরিপন্থি, বৈষম্যমূলক এবং দুদক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বুধবার (৪ জুন) বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রাশেদ খান বলেন, এই বাজেটে আগের সরকারের নীতির ছাপই দেখা যাচ্ছে। বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা ব্যাংক ঋণ ও বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভর করে পূরণ করা হবে। অর্থাৎ, বিদেশনির্ভরতা কমেনি। চলতি অর্থবছরে এনবিআর ৪ লাখ ৯৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি, এবং নতুন বাজেটেও তেমন কার্যকর পরিকল্পনা নেই।

তিনি আরও বলেন, এবারের বাজেটে সুদ পরিশোধের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৫০০ কোটি টাকা বেশি। এই বাড়তি বরাদ্দ দেশি-বিদেশি ঋণের বোঝা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

সরকার ইতিমধ্যেই দুর্বল ব্যাংকগুলোতে ২৯,৪১০ কোটি টাকা ছাপিয়ে দিয়েছে। নতুন করে টাকা ছাপালে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে, যা সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়াবে। যদিও সরকার গড় মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়েছে, বাস্তবে সেটা প্রায় ১০ শতাংশে রয়েছে বলে জানান তিনি।

চাকরির সংকট ও বৈষম্য প্রসঙ্গে মন্তব্য

রাশেদ খান বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও চাকরিতে বৈষম্য দূর করার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বাজেটে সেই লক্ষ্যে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। ২৭ লাখ শিক্ষিত বেকারের জন্য কোনো স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হলেও সাধারণ মানুষের আয়-ব্যয়ের ব্যবধান, ধনী-গরিবের বৈষম্য ও মূল্যস্ফীতি কমবে না বলে তিনি মনে করেন।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেট নিয়ে উদ্বেগ

স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার কমিশন ১৫ শতাংশ বরাদ্দ চাইলেও নতুন বাজেটে তা মাত্র ৫.৩ শতাংশে বাড়ানো হয়েছে, যা মোটেই যথেষ্ট নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষার জন্য বরাদ্দ ৯৫ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা, যা জাতীয় বাজেটের ১২.১ শতাংশ। অথচ শিক্ষাবিদরা এই খাতে ২০ শতাংশ বরাদ্দের দাবি করেছেন।

রাশেদ খান বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত নিয়ে সরকারের ভাবনা আগের সরকারের চিন্তার সীমানা পেরোয়নি। এসব খাতে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি।

কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে কড়া সমালোচনা

তিনি বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অসাংবিধানিক, নৈতিকতা বিরোধী ও বৈষম্যমূলক। ফ্ল্যাট কেনা বা ভবন নির্মাণে কালো টাকা ব্যবহারের সুযোগও গ্রহণযোগ্য নয়। নির্দিষ্ট হারে কর দিলেই টাকা বৈধ—এমন দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক নয়।

কিছু ইতিবাচক দিকও তুলে ধরেন

তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের জন্য ৪০৫ কোটি টাকার বরাদ্দ, করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো ও নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ১০০ কোটি টাকার তহবিল ইতিবাচক দিক।

এছাড়া সামাজিক সুরক্ষার আওতায় ভাতা ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হলেও তা বাস্তব চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়।

কৃষি ও বিনিয়োগ খাত প্রসঙ্গে

রাশেদ বলেন, কৃষি আয়ে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত রাখা ও বরাদ্দ বাড়ানো ভালো উদ্যোগ। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো বড় সুবিধা রাখা হয়নি। শেয়ারবাজারে লোকসানে থাকা অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু এ নিয়ে কার্যকর পরিকল্পনার অভাব রয়েছে।

তবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার কমিয়ে ২০ শতাংশ এবং তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির কর ২৭ শতাংশ রাখার মাধ্যমে নতুন কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে।

দাম কমানোর প্রস্তাব থাকলেও মূল্যস্ফীতির চাপে জনগণ বিপাকে পড়বে

তিনি বলেন, কিছু নিত্যপণ্যের দাম কমানোর প্রস্তাব ভালো হলেও সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতির কারণে অন্য পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, আব্দুজ জাহের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিলু খান এবং যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.