Header Ads

ইসলামী দলগুলোর ঐক্যজোট গঠনের উদ্যোগ

       

ইসলামী দলগুলোর ঐক্যজোট গঠনের উদ্যোগ



আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো একক প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্যে বৃহত্তর নির্বাচনী জোট বা সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে। দলগুলো চাইছে প্রার্থিতা নির্ধারণে একে অপরকে ছাড় দিয়ে সম্মিলিতভাবে নির্বাচন করতে। এ নিয়ে এখন চলছে পর্দার আড়ালে তৎপরতা।

দীর্ঘদিন ধরেই এক প্ল্যাটফর্মে ইসলামী দলগুলোকে একত্রিত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। নিবন্ধিত এবং ভোটব্যাংক থাকা ৮টি ইসলামী দল এই সমঝোতার আলোচনায় রয়েছে। একইসঙ্গে এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) যুক্ত করার বিষয়েও আলোচনা চলছে।

তবে এখনও পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সবকিছু স্পষ্ট হবে। তবে এই প্রক্রিয়ায় থাকবে না হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনটি রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত নয় এবং বিএনপির সঙ্গে জোটের পক্ষে রয়েছে।

গত ১৩ জুন লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর রাজনীতিতে নতুন গতি এসেছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নির্ধারিত হওয়ার পর থেকেই বিএনপিসহ মিত্র দলগুলো প্রস্তুতি শুরু করেছে।

জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে একটি বড় ধরনের নির্বাচনী ঐক্যের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তারা চায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য দলগুলোকে পাশে পেতে। ইতোমধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে।

একসময় জামায়াতের কড়া সমালোচক ছিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তারা জামায়াতকে ‘ইসলামী দল নয়’ বলেও মন্তব্য করেছিল। তবে বর্তমানে দলটির নেতারা বলছেন, অতীত ভুলে ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করাই এখন মূল লক্ষ্য।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মগবাজারে এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “ইসলামী আলেম সমাজ বুঝতে পেরেছেন এবারের নির্বাচনে ইসলামী শক্তির ঐক্য প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে আমরা এগোচ্ছি।”

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, “জামায়াতের সঙ্গে আমাদের নির্বাচনী জোট হচ্ছে শুধুমাত্র ভোটের স্বার্থে। একক প্রার্থী দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।”

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, “অতীতের সমালোচনা বড় বিষয় নয়। দেশ ও উম্মাহর স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

তথ্য অনুযায়ী, সমঝোতা চূড়ান্ত হলে ৮টি ইসলামী দল এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে। দলগুলো হলো—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট এবং খেলাফত আন্দোলন।

এই দলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের জন্য একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠিত হয়েছে। তাদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক এবং যোগাযোগ অব্যাহত আছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামী আবারও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়। এরপর ১৫ আগস্ট থেকে তারা বিভিন্ন দল ও ইসলামী সংগঠনের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করে।

চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ১২ দলীয় জোট, জাকের পার্টি, লেবার পার্টি, খেলাফত মজলিস, ফরায়েজী আন্দোলনের মতো সংগঠনের সঙ্গে জামায়াতের আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। জামায়াত আমিরও মাদ্রাসা শিক্ষক ও আলেমদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।

জানা গেছে, জামায়াত এখন ইসলামপন্থি দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে প্রতিটি আসনে একজন করে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। ইসলামী আন্দোলনসহ ছয়টি দলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত আন্দোলনের অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়। কেউ কেউ বিএনপির সঙ্গেও সমঝোতার কথা ভাবছে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল হালিম বলেন, “জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা নিয়ে ভাবছি। প্রার্থী নির্ধারণ ও আসন বণ্টন নিয়ে লিয়াজোঁ কমিটির মাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে। তবে জোটও হতে পারে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে তফসিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। সমঝোতা হলে যেসব দল আগে প্রার্থী ঘোষণা করেছে, তারা প্রার্থী প্রত্যাহার করবে।”

ইসলামী আন্দোলনের গাজী আতাউর রহমান বলেন, “আমরা একক প্রার্থী দিতে চাই। কাওমি ঘরানার ইসলামী দলগুলোর মধ্যে আলোচনা চলছে।”

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, “আমাদের পাঁচটি দল—খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও নেজামে ইসলাম—সমঝোতা নিয়ে আলোচনা করছে। এরপর অন্য দলগুলোর বিষয়ে ভাবা হবে।”

তিনি বলেন, “নীতিগতভাবে সবাই জোটে যেতে চায়। তবে কীভাবে এবং কারা থাকবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।”

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নির্বাচনে থাকবে কি না—এ প্রশ্নে সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, “হেফাজত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। নির্বাচনী বিষয়ে আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে হেফাজতের অন্তর্ভুক্ত কেউ চাইলে আলাদাভাবে জোটে যেতে পারে।”

সংক্ষেপে মূল পয়েন্ট:

  • জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ৮টি দল নির্বাচনী সমঝোতায় আগ্রহী

  • হেফাজতে ইসলাম নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে থাকবে

  • তফসিল ঘোষণার পর সমঝোতার রূপরেখা চূড়ান্ত হবে

  • ইসলামপন্থি ভোট বিভক্ত না করতে একক প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে চায় দলগুলো

  • অতীতের সমালোচনা ভুলে ‘দেশ ও উম্মাহ’র স্বার্থে ঐক্যের পথে দলগুলো

  • বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার কথাও আলোচনায় আছে কিছু অংশে

No comments

Powered by Blogger.