বিশ্বে কত কোটি মানুষ ধুমপান করে?

 

করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অনেক দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা ব্যাহত হয়েছে। এই জটিল পরিস্থিতির কারণে অন্তত ৯ কোটি ৫০ লাখ মানুষ ধূমপান ছাড়ার সুযোগ হারিয়েছে। আজ শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে, যেটি ৫৭টি তামাকবিরোধী সংগঠনের সমর্থন পেয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তামাক নিয়ন্ত্রণ সনদে ১৬৮টি দেশ সই করে ২০২৫ সালের মধ্যে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ধূমপান ৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। এই লক্ষ্য ছিল টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (SDG) অংশ। তবে ২০২৪ সালে সময়সীমা আরও পাঁচ বছর বাড়াতে হয়েছে। কারণ, অনেক দেশ তামাকবিরোধী কার্যক্রমে পর্যাপ্ত অর্থ বা মনোযোগ দিতে পারেনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমেছে ঠিকই, কিন্তু নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধূমপান ৩০ শতাংশ কমানো সম্ভব হয়নি। ফলে এখনও বিশ্বজুড়ে প্রায় ১২০ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ ধূমপান করছেন। অথচ লক্ষ্য ছিল ২০২৫ সালের মধ্যে এ সংখ্যা ১১১ কোটি ২৪ লাখে নামিয়ে আনা।

এই প্রতিবেদনটি জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটি প্রকাশ করেছে 'অ্যাকশন অন স্মোকিং অ্যান্ড হেলথ কানাডা (ASH Canada)'। এই প্রতিবেদনকে সমর্থন দিয়েছে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো-ফ্রি কিডস, ক্যানসার রিসার্চ ইউকে সহ আরও ৫৭টি সংস্থা।

প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, তামাক নিয়ন্ত্রণে গতি না বাড়ালে ভবিষ্যতে ধূমপানজনিত রোগে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

জাতিসংঘ এর আগেও জানিয়েছে, অর্থনৈতিক সংকট, ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং মহামারিজনিত কারণে ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের অনেকগুলোতে অগ্রগতি থেমে গেছে। এই লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য হ্রাস, ক্ষুধামুক্তি, মানসম্মত শিক্ষা এবং উন্নত স্বাস্থ্যসেবা।

এএসএইচ কানাডার প্রতিবেদনে দেশগুলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। এ উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে—তামাক পণ্যের ওপর কর বৃদ্ধি, জনসমক্ষে ধূমপান নিষিদ্ধকরণ, এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা।

সার্বিকভাবে বলা যায়, বিশ্বজুড়ে ধূমপান নিয়ন্ত্রণের প্রয়াস নানা সংকটে থমকে গেছে। এখন সময় এসেছে এই খাতটিতে আরও কঠোর ও সুপরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়ার, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তামাকের ভয়াবহ পরিণতি থেকে রক্ষা করা যায়।