ইরানের ভয়ে কাঁপছে ৩ দেশ, উভয় সংকটে যুক্তরাষ্ট্র
ইরানকে কেন্দ্র করে জটিল পরিস্থিতির মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একদিকে, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে, গুরুত্বপূর্ণ আরব মিত্র রাষ্ট্রগুলো—সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত—এই সম্ভাব্য হামলার বিরোধিতা করছে।
চলতি মাসের মাঝামাঝি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফর করেন। তিনি সৌদি আরব, কাতার ও আমিরাতে বৈঠক করেন দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে। সফরে তিন দেশের নেতারা ট্রাম্পকে অনুরোধ করেন, ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোর ওপর যেন কোনো হামলা না চালানো হয়।
তবে এই অনুরোধ ইরানকে রক্ষার উদ্দেশ্যে নয়। বরং এসব আরব দেশের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালালে ইরান পাল্টা হামলা চালাতে পারে তাদের ওপর। কারণ, এই তিন দেশেই মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
ইতোমধ্যে ইরানের সামরিক বাহিনী হুঁশিয়ার করে জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত ৫০ হাজার মার্কিন সেনা যেন কাচের ঘরে বসে পাথর ছোড়ার মতো কাজ না করে। তারা বলেছে, তেহরানের ওপর হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি থাকা দেশগুলোতে জবাব দেওয়া হবে।
এমনকি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এসব দেশের সরকারকে চিঠি পাঠিয়ে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে, ইরানে হামলার জবাবে যেসব ঘাঁটি থেকে প্রতিক্রিয়া আসবে, সেসব জায়গায় পাল্টা আঘাত হানা হবে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান, আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ এবং কাতারের আমির শেখ তামিম আল থানি ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলেছেন—ইরানে হামলা হলে তেহরান পাল্টা তাদের দেশেই হামলা চালাতে পারে। মার্কিন ঘাঁটি থাকায় এসব দেশ ঝুঁকিতে রয়েছে।
এরই মধ্যে সৌদি আরবের রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান দুই দশকেরও বেশি সময় পর সম্প্রতি ইরান সফর করেন। সফরটি ছিল মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য সংঘাত এড়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক পদক্ষেপ। তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে সৌদি বাদশাহ সালমানের একটি গোপন বার্তা পৌঁছে দেন। সেখানে ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির আলোচনায় গুরুত্ব দিয়ে অংশ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
যদিও আরব দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানে হামলা থেকে বিরত রাখতে চায়, ইসরায়েল এ বিষয়ে এখন আরও আগ্রহী। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি জানান, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে। এদিকে ইরানও স্পষ্ট করে বলেছে, তেহরানের ওপর কোনো হামলা হলে তা সহ্য করা হবে না, এবং উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।
এই পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে কঠিন এক দ্বিধায় ফেলেছে। একদিকে মিত্র ইসরায়েল, অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ আরব মিত্র রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক ভারসাম্য—দুই দিক সামলাতে হচ্ছে একসঙ্গে।
No comments