চার দফা দাবিতে হেফাজতের মহাসমাবেশ

 

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আজ শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক মহাসমাবেশের আয়োজন করেছে। এই সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য হলো নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবি উপস্থাপন। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে এই কর্মসূচি। আয়োজকরা জানিয়েছেন, এতে দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে অংশ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

হেফাজতের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এবং মহাসচিব আল্লামা সাজেদুর রহমান এক বিবৃতিতে জানান, কথিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব কোরআনবিরোধী এবং ধর্মপ্রাণ নারীদের মর্যাদার প্রতি অবমাননাকর। তাঁরা দাবি করেন, এই কমিশন নারীকে ইউরোপীয় ধারণা অনুযায়ী 'বাজারি পণ্য' হিসেবে দেখানোর অপচেষ্টা করছে। যৌনকর্মীদের ‘শ্রমিক’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নারীসত্তার অবমাননা করা হয়েছে বলেও তাঁরা উল্লেখ করেন।

সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেন, কমিশনের প্রস্তাব কেবল ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিকই নয়, বরং এটি কোরআনের প্রতি কটাক্ষ। তাঁর মতে, এতে বাংলাদেশের পরিবারভিত্তিক সমাজব্যবস্থাকে ভেঙে পাশ্চাত্যের পরিবারবিহীন সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

মহাসমাবেশের চারটি মূল দাবি:

1. নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল।

2. সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল।

3. বর্তমান সরকারের সময়ে ইসলামপন্থী নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার।

4. শাপলা চত্বরসহ সব গণহত্যার বিচার এবং ফিলিস্তিন ও ভারতের মুসলিম নিপীড়ন বন্ধ।

হেফাজতের নেতারা জানান, সমাবেশ সফল করতে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অন্তত পাঁচ হাজার বাসে লোক আসার আয়োজন করা হয়েছে এবং চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে অন্তত অর্ধলক্ষাধিক নেতাকর্মী অংশ নেবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বরিশাল থেকেও কয়েক হাজার মানুষ লঞ্চে করে অংশ নিতে যাচ্ছেন।

ঢাকা মহানগর হেফাজতের সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দাবিগুলো মানা না হলে সারা দেশ অচল করে দেওয়ার মতো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি উপেক্ষা করা হলে আগামীকাল থেকেই ঢাকা অচল হয়ে যাবে।’

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে হেফাজতের নেতাকর্মীরা সারাদেশে গণসংযোগ চালিয়েছেন। ২২ এপ্রিল থেকে দেশজুড়ে প্রচারণা চালানো হয়েছে, যার অংশ হিসেবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সভা, বিক্ষোভ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আজকের মহাসমাবেশ।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মীর ইদ্রিস জানান, তৃণমূল পর্যন্ত মহাসমাবেশ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তত পাঁচ লাখ মানুষের সমাবেশ করার প্রত্যাশা করছি।’

হাটহাজারী মাদরাসার সিনিয়র মুফতি ও হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা জসিমুদ্দিনও নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো বাতিলের দাবি জানান। তিনি বলেন, ইসলামবিরোধী কোনো প্রস্তাব এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ মেনে নেবে না।

এই মহাসমাবেশ হেফাজতে ইসলামের জন্য শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচিই নয়, বরং ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতিবাদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সংগঠনটি দাবি করেছে, সরকার যদি তাদের দাবি না মানে, তাহলে তারা পরবর্তী কর্মসূচিতে আরও কঠোর হতে বাধ্য হবে।