বিজেপি মন্ত্রীর ক্ষমা গ্রহণ করল না ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

 ভারতের আলোচিত নারী সেনা কর্মকর্তা কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে বিজেপি মন্ত্রী কুনওয়ার বিজয় শাহের আপত্তিকর মন্তব্য এখন দেশজুড়ে বিতর্কের কেন্দ্রে। সেনা কর্মকর্তা সম্পর্কে 'সন্ত্রাসীদের বোন' বলার পর সমালোচনার মুখে পড়ে মন্ত্রী প্রকাশ্যে দুঃখপ্রকাশ করলেও, তা গ্রহণ করেনি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

সোমবার (২০ মে) বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিংয়ের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট ভাষায় জানায়, “এই দুঃখপ্রকাশ আমাদের কাছে কুমিরের কান্নার মতো মনে হচ্ছে, যেন আপনি কেবল আইনি ঝামেলা এড়াতে চাচ্ছেন। আমরা এই ক্ষমা গ্রহণ করছি না।”

ঘটনার সূত্রপাত, যখন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে যৌথভাবে ব্রিফ করেন উইং কমান্ডার বায়োমিকা সিংহের সঙ্গে। এর কিছুদিন পর এক জনসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে বিজেপির মন্ত্রী কুনওয়ার বিজয় শাহ তাকে ‘সন্ত্রাসীদের বোন’ বলে আক্রমণ করেন। সেই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা।

বিচারপতিরা শুনানির সময় আরও বলেন, “আপনি একজন জননির্বাচিত প্রতিনিধি। প্রতিটি শব্দের দায়ভার আপনার আছে। আপনার মন্তব্য ছিল অশোভন, চিন্তাহীন এবং একেবারে অগ্রহণযোগ্য। আমরা ভিডিও দেখেছি—আপনার বক্তব্য প্রায় গালাগালির পর্যায়ে চলে গিয়েছিল।”

এ পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট মধ্যপ্রদেশ পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে, একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠন করে পুরো ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে।

প্রসঙ্গত, কর্নেল সোফিয়া কুরেশির নাম উঠে আসে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে এক সেনা ব্রিফিংয়ে। এই অপারেশনটি ভারতের পেহেলগাম হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার প্রেক্ষিতে পরিচালিত হয়। যদিও পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে এখনও নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জবাবে পাকিস্তান ‘অপারেশন বুনিয়ান উম মারসুস’ নামক পাল্টা সামরিক প্রস্তুতির ঘোষণা দেয়।

এই ঘটনায় বিজেপি মন্ত্রীর মন্তব্য রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, একজন নারী সেনা কর্মকর্তার প্রতি এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য দেশের সশস্ত্র বাহিনী এবং নারীদের মর্যাদাকে অপমান করেছে।

সামগ্রিকভাবে, মন্ত্রীর দুঃখপ্রকাশে আদালতের অনাস্থা এবং তদন্তের নির্দেশ রাজনৈতিক শুদ্ধাচার এবং বাক-দায়বদ্ধতার প্রশ্ন নতুন করে সামনে এনেছে।