গাজায় ৩৯ হাজারের বেশি শিশু হারিয়েছে বাবা-মা: ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখে ফিলিস্তিন
ইসরায়েলের টানা হামলার কারণে গাজা উপত্যকা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই সংঘাতের সবচেয়ে নির্মম শিকার হচ্ছে গাজার শিশুরা। ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, চলমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৯ হাজার ৩৮৪ জন শিশু তাদের বাবা, মা কিংবা দুজনকেই হারিয়ে অনাথ হয়ে পড়েছে।
এদের মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার শিশু পুরোপুরি এতিম। সংস্থাটি এটিকে 'আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অনাথ শিশু সংকট' হিসেবে অভিহিত করেছে।
৫ আগস্ট ফিলিস্তিনে শিশু দিবস পালনের সময় এই মর্মান্তিক তথ্য প্রকাশ করা হয়। ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত ৫৩৪ দিনের লাগাতার বোমাবর্ষণে এই বিপুল সংখ্যক শিশুর জীবন চিরতরে পাল্টে গেছে। তাদের অনেকেই এখন পরিবারহীন অবস্থায় বেঁচে আছে, যাদের জীবনে ফিরে আসবে না আর আগের সেই নিরাপদ দিনগুলো।
জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি ইউনিসেফের তথ্য তুলে ধরে বলেন, গাজায় প্রতিদিন অন্তত ১০০ শিশু নিহত বা আহত হচ্ছে। গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল আবারও যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে নতুন করে হামলা শুরু করেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
ফিলিপ লাজারিনি বলেন, “শিশুরা যে যুদ্ধে অংশ নেয়নি, সেখানে তাদের জীবন হারানো খুবই দুঃখজনক। এটি মানবতার জন্য এক কলঙ্ক।” তিনি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান এবং শিশুদের রক্ষার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৬০৯ জনে। আহত হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৩ জন। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৬ জন নিহত ও ২৮৭ জন আহত হয়েছেন। নতুন করে চালানো হামলায় প্রায় ১ হাজার ২৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৩ হাজার ২২ জন আহত হয়েছেন।
এই ভয়াবহ পরিসংখ্যান আরও একবার প্রমাণ করে, গাজার শিশুরা আজ সবচেয়ে বড় মূল্য দিচ্ছে এমন এক যুদ্ধে, যা তারা কখনো চায়নি। বিশ্ববাসীর এখনই উচিত এই মানবিক সংকটের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, যাতে নিষ্পাপ শিশুদের আর প্রাণ হারাতে না হয়।
No comments